শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক বললেন নুরুল হক নুর

শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক বললেন নুরুল হক নুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

পটুয়াখালীর গলাচিপায় এক মতবিনিময়সভায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক দাবি করে বলেছেন, দেশে শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ও শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সরকারকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে গলাচিপা উপজেলার অফিসার্স ক্লাবে গণ অধিকার পরিষদের উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সভায় তিনি এসব বক্তব্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংবাদিক, শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় নুরুল হক নুর বলেন, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিভিন্ন দাবি ও অধিকার আদায়ে আন্দোলন কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাঁর মতে, বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে শিক্ষকরাও তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি জানান, শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি দাওয়া নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হলে শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক মান উন্নয়ন সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা খাতের উন্নয়নে সরকারের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকরা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক তৈরির দায়িত্বে নিয়োজিত থাকায় তাদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিনি প্রশ্ন তোলেন—বাংলাদেশে মোট শিক্ষক সংখ্যা বিবেচনা করলে তাদের বেতন কাঠামো উন্নীত করতে কতটুকু অতিরিক্ত ব্যয় প্রয়োজন? তাঁর মতে, শিক্ষায় বিনিয়োগকে ব্যয় হিসেবে দেখা উচিত নয়; বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নমূলক বিনিয়োগ, যা দেশের জনশক্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের ‘প্রথম শ্রেণির’ মর্যাদা প্রদান করলে তাদের দায়িত্বপালনের মান আরও উন্নীত হবে। তিনি মনে করেন, শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি ও তাদের প্রতি সমাজের সম্মান বৃদ্ধি পেলে তা শিক্ষার্থীদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে সরকার শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় নীতিগত পদক্ষেপ নেবে।

নুরুল হক নুর অভিযোগ করেন যে, শিক্ষকদের আন্দোলনের সময় তাদের নরম অবস্থানকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়েছে, যা তিনি অন্যায় বলে মনে করেন। তিনি বলেন, দাবিদাওয়া উত্থাপন করাকে নেতিবাচকভাবে দেখা উচিত নয়, বরং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সরকার শিক্ষকদের বদলিসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।

সভায় তিনি দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক কাঠামোর বাইরে অবস্থান করায় বিভিন্ন কর্মসূচি ও নীতিগত সিদ্ধান্তে ভিন্নমাত্রা দেখা যাচ্ছে। তিনি মন্তব্য করেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ তাদের অধিকার আদায়ে চাপ প্রয়োগ করে সফল হলেও শিক্ষকরা তা করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি বলেন, শিক্ষক সমাজকে ন্যায্য মর্যাদা দেওয়া না হলে দেশের সামগ্রিক শিক্ষা কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে।

গলাচিপা উপজেলার স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষার মান, শিক্ষক সংকট, অবকাঠামোগত ঘাটতি ও প্রশিক্ষণ সুবিধার অভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। সভায় এসব প্রেক্ষাপটও পরোক্ষভাবে উঠে আসে। বক্তারা মনে করেন, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া পূরণ হলে স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন দ্রুত হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষকদের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় শিক্ষক নিয়োগ ও টিকে থাকার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়।

সভায় গণ অধিকার পরিষদের গলাচিপা শাখার আহ্বায়ক আলহাজ হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সংগঠনের সদস্যসচিব মো. জাকির হোসেন মুন্সি, উপাধ্যক্ষ নিরোধ লাল শিকদার, সহকারী শিক্ষক মুক্তা রহমান ফাহিমা, আনোয়ার শিপন, সাংবাদিক প্রতিনিধি মু. খালিদ হোসেন মিলটন, জেলা যুব অধিকার পরিষদের সহসভাপতি মহিবুল্লাহ এনিম ও কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি আবু নাইম প্রমুখ।

বক্তারা শিক্ষকদের মর্যাদা, বেতন কাঠামো, বদলি নীতি, বিদ্যালয় পর্যায়ের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। উপস্থিত ব্যক্তি ও সংগঠনের নেতারা শিক্ষকদের দাবি যুক্তিসঙ্গত বলে উল্লেখ করেন এবং এসব দাবি বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

সভা শেষে আয়োজকরা জানান, স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে গণ অধিকার পরিষদ কাজ চালিয়ে যাবে এবং শিক্ষক সমাজের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। উপস্থিত শিক্ষকরা আশা প্রকাশ করেন যে, এ ধরনের আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান ও নীতি প্রণয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ