খেলাধুলা ডেস্ক
২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির জন এফ. কেনেডি সেন্টারে, যেখানে অংশ নেয় বিশ্বের শীর্ষ ফুটবল ফেডারেশন ও দলগুলোর প্রতিনিধিরা। ড্র অনুষ্ঠানে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার প্রধান কোচ লিওনেল স্কালোনি বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে মঞ্চে ওঠেন। তবে ট্রফি ধরার সময় তাঁর হাতে গ্লাভস পরা থাকার ঘটনাটি আলোচনার জন্ম দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক ও কোচ খালি হাতে ট্রফি স্পর্শের অনুমতি পান। এ পরিস্থিতি নিয়ে পরদিন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো স্কালোনির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।
গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত ড্রয়ের সময় স্কালোনির হাতে গ্লাভস দেখা গেলে উপস্থিত অনেকের মধ্যেই বিস্ময় তৈরি হয়। পরে জানা যায়, আয়োজকদের নির্দেশনায় তাঁকে গ্লাভস পরতে বলা হয়েছিল, যদিও এ নির্দেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না। এ বিষয়টি ফিফা সভাপতির অগোচরে ঘটেছে বলে জানা যায়। পরদিন বিশ্বকাপের পূর্ণাঙ্গ সূচি প্রকাশের অনুষ্ঠানে ইনফান্তিনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্কালোনির কাছে ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে এমন বিভ্রান্তি এড়াতে ফিফা আরও সতর্ক থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
সূচি প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্কালোনি তাঁর দলের প্রথম ম্যাচ নিয়ে কথা বলেন। ২০২৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ১৭ জুন আলজেরিয়ার বিপক্ষে কানসাস সিটি স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে। তিনি বলেন, আগের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে পরাজয় দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা ছিল এবং নতুন আসরে প্রতিটি ম্যাচই সমান গুরুত্বের হবে। দলকে শুরু থেকেই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
গ্রুপপর্বের বাকি দুটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে ডালাস স্টেডিয়ামে, যেখানে আর্জেন্টিনা ২২ জুন অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে এবং ২৮ জুন জর্ডানের বিপক্ষে মাঠে নামবে। ডালাসে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় অনুষ্ঠিত হবে। সময়সূচির কারণে আবহাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন স্কালোনি। তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিকূল আবহাওয়া উভয় দলের জন্য সমান চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে এবং নির্ধারিত সূচির বাইরে কোনো পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে দলীয় প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য গরম পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নেওয়া হবে।
ইনফান্তিনো স্কালোনির বক্তব্যের পর আগের দিনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন এবং বিশ্বকাপ ট্রফি খালি হাতে স্পর্শ করার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ফিফা বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং ট্রফি স্পর্শের অনুমতি দিতে কোনো বাধা নেই। স্কালোনিও পরিস্থিতিকে সহজভাবে গ্রহণ করেন বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রতিনিধিরা জানান।
২০২৬ বিশ্বকাপ আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা। তিন দেশে বিস্তৃত এ টুর্নামেন্টে থাকবে মোট ৪৮ দল, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিসরের আসর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বর্ধিত দলসংখ্যার ফলে গ্রুপপর্ব ও নক-আউট পর্বের কাঠামোতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা অংশগ্রহণকারী দলগুলোর প্রস্তুতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আর্জেন্টিনা গত আসরের চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রত্যাশাও বেশি।
নতুন ফরম্যাটে প্রতিটি ম্যাচ দলের পরবর্তী পথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফলে দলগুলোকে ভ্রমণ, আবহাওয়া ও সময়সূচি—এই তিনটি বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। আর্জেন্টিনার তিনটি ম্যাচ তিন ভিন্ন দিনের পাশাপাশি দুটি শহরে অনুষ্ঠিত হবে। কানসাস সিটি ও ডালাস—দুটি ভেন্যুই আবহাওয়াগত দিক থেকে গরমের সময়ে বেশ চ্যালেঞ্জিং বলে পরিচিত। তাই উপযুক্ত প্রস্তুতি এবং খেলোয়াড়দের কন্ডিশনিং কোচদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে।
ড্র শেষে ফুটবলবিশ্বে আর্জেন্টিনার গ্রুপকে ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া ও জর্ডান—তিনটি দলই সাম্প্রতিক সময়ে তাদের পারফরম্যান্সে উন্নতি দেখিয়েছে। বিশেষ করে অস্ট্রিয়া সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছে। আলজেরিয়া আফ্রিকান অঞ্চলে অভিজ্ঞ দল হিসেবে পরিচিত, আর জর্ডান সাম্প্রতিক টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকতা প্রদর্শন করেছে।
আর্জেন্টিনা তাদের শিরোপা ধরে রাখতে চাইলে গ্রুপপর্ব থেকেই শক্তিশালী পারফরম্যান্স প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে ফুটবলবিশ্লেষকেরা মনে করছেন। নতুন ফরম্যাটে ভুলের সুযোগ কম থাকায় প্রতিটি ম্যাচে কৌশলগত পরিকল্পনা এবং খেলোয়াড় ব্যবস্থাপনা হবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে সমর্থকদের আগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশের মধ্য দিয়ে এখন দলগুলো প্রস্তুতির চূড়ান্ত ধাপে প্রবেশ করছে। আর্জেন্টিনাসহ সব দলই নিজেদের শক্তি-দুর্বলতা বিবেচনায় রেখে আগামী কয়েক মাসে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।


