জাতীয় ডেস্ক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পূর্ববর্তী নির্বাচনে যেখানে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতো, এবার তা বিকেল ৫টা পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। রোববার ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক—তফসিল, গণভোট, প্রশাসনিক প্রস্তুতি ও মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম—পর্যালোচনার লক্ষ্যে আয়োজিত কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি হিসেবে সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে রেকর্ডিংয়ের জন্য চিঠি দেওয়া হবে। তফসিল ঘোষণার আগে পুরো কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, যা নির্বাচন প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিক ধাপ হিসেবে বিবেচিত।
সচিব জানান, তফসিল ঘোষণার দিনই মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। ভোট আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি উপজেলায় দুইজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে, যাতে আচরণবিধি বাস্তবায়ন ও শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনিক তৎপরতা জোরদার থাকে। এছাড়া ভোটের আগের রাতেই ব্যালট পেপার ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে ভোটের দিন সুষ্ঠুভাবে প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে সরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, যা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভোটের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন। তবে ব্যাংক ও পোস্ট অফিস কমিশনের প্রয়োজন অনুযায়ী খোলা রাখা হবে। সচিব আরও জানান, তফসিল ঘোষণার পর উপদেষ্টা পরিষদ কোনো নতুন প্রকল্প অনুমোদন করতে পারবে না। পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্য দায়িত্বে বহাল থেকে ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না। কেবল আইনের বিধান অনুযায়ী যোগ্য ব্যক্তিরাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
পোস্টার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইসি সচিব বলেন, তফসিল ঘোষণার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব নির্বাচনী পোস্টার সরিয়ে ফেলতে হবে। নির্ধারিত সময়ে পোস্টার না সরালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনী পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও শৃঙ্খলাপূর্ণ রাখতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসী ভোটারদের জন্য ব্যালট পেপার মুদ্রণ শুরু হয়েছে, যা তাদের ভোটদান প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে সহায়তা করবে।
সভায় আলোচিত বিষয়গুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের সময়সীমা বৃদ্ধি, মাঠপর্যায়ের প্রশাসনিক প্রস্তুতি, আচরণবিধি বাস্তবায়ন এবং ভোটের আগে-পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের ফলে অধিকসংখ্যক ভোটারকে ভোটদানে সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি ভিড় কমাতে এবং কেন্দ্রগুলোতে ভোট পরিচালনা আরও স্বচ্ছন্দ করতে সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের নিয়োগে সরকারি এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পেশাদারিত্ব ধরে রাখতে সাহায্য করবে। তফসিল ঘোষণার পর নতুন প্রকল্প অনুমোদনে নিষেধাজ্ঞা এবং দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টাদের প্রার্থী হতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে।
ইসির এসব প্রস্তুতি ও নির্দেশনার ফলে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনিক কর্মকাঠামো আরও সুসংগঠিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভোটের পরিবেশ, নিরাপত্তা, আচরণবিধি অনুসরণ এবং নির্বাচনী স্বচ্ছতা রক্ষায় কমিশন পূর্ণ প্রস্তুতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মাঠপর্যায়ে এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়নই নির্ধারণ করবে ভোটগ্রহণ কতটা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হবে।


