ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসে ৯১৬ জনের মৃত্যু, ২৭৪ জন নিখোঁজ

ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসে ৯১৬ জনের মৃত্যু, ২৭৪ জন নিখোঁজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সুমাত্রা ও আচেহ প্রদেশে ঘূর্ণিঝড় ও টানা ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে এখন পর্যন্ত ৯১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং অন্তত ২৭৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া দুর্যোগে উপকূলীয় এলাকা ও বহু গ্রাম-শহর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ‘সেনিয়া’সহ ধারাবাহিক মৌসুমি ঝড় এবং দীর্ঘস্থায়ী ভারী বর্ষণের কারণে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে মাটি স্যাচুরেটেড হয়ে পড়ায় একাধিক স্থানে বড় আকারের ভূমিধস হয়, যা বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সড়ক অবকাঠামোর ওপর ধসে পড়ে। এতে হতাহতের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং উদ্ধার কার্যক্রম জটিল হয়ে ওঠে।

আচেহ প্রদেশের তামিয়াং জেলায় সবচেয়ে বেশি মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যার পানিতে অনেক গ্রামীণ সড়ক ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এর ফলে খাদ্য, নিরাপদ পানীয় জল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করা হলেও পর্যাপ্ত পানি ও স্যানিটেশনের সুবিধা সেখানে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারি সহায়তা কেন্দ্রগুলো থেকে খাবার ও পানি সংগ্রহ করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে নৌকা বা অস্থায়ী যান ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে এবং শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, নিরাপদ পানি না পাওয়ায় পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ছে এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি প্রবাও সুবিয়ান্তো কয়েক দিন আগে এক বক্তব্যে জানিয়েছিলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। তবে সুমাত্রা ও আচেহ প্রদেশের কর্মকর্তারা এ মূল্যায়নের সঙ্গে একমত নন। তাঁদের মতে, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং অতিরিক্ত জনবল, সরঞ্জাম ও ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।

পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির একাধিক পরিবেশ সংগঠন দাবি করেছে, ব্যাপক বন উজাড়, অনিয়ন্ত্রিত ভূমি ব্যবহার এবং অবৈধ খনন কার্যক্রম বন্যা ও ভূমিধসের তীব্রতা বাড়িয়েছে। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে কয়েকটি বড় জলবিদ্যুৎ ও খনিশিল্প প্রকল্পের কারণে পাহাড়ি অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, ফলে ভারী বৃষ্টির সময় মাটির ধারণক্ষমতা কমে গিয়ে ভূমিধসের ঝুঁকি বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং হেলিকপ্টার, নৌযান ও ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আসন্ন দিনগুলোতে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক