অর্থনীতি ডেস্ক
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে নতুন আন্তর্জাতিক বাজার চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আট দিনব্যাপী এসএমই পণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী বক্তব্যে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, কোন দেশে কোন ধরনের পণ্যের চাহিদা বেশি এবং কোথায় নতুন রপ্তানি সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব—এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন, এসব তথ্যের ভিত্তিতে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারা পণ্যে বৈচিত্র আনতে এবং আন্তর্জাতিক বাজারের উপযোগী উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন, যা সামগ্রিক শিল্পায়নকে আরও গতিশীল করবে।
আদিলুর রহমান খান বলেন, বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায়ও এসএমই খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, দেশে বর্তমানে মোট শিল্পের প্রায় ৯৯ শতাংশই কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত, যেখানে তুলনামূলক কম মূলধনে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব। এই শ্রমঘন খাতকে শক্তিশালী করে শিল্পে সুষম উন্নয়ন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনকে ত্বরান্বিত করা যায়।
তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনাবিহীনভাবে বিভিন্ন স্থানে শিল্প স্থাপন করলে পরিবেশ এবং স্থানীয় অবকাঠামোর ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। তাই নির্ধারিত শিল্পাঞ্চলে কারখানা স্থাপন এবং শিল্পনগরীর অভ্যন্তরে জলাধারসমূহ সংরক্ষণ ও দূষণরোধে সকল পক্ষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা বজায় রাখলে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে শিল্পায়ন এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রসঙ্গে শিল্প উপদেষ্টা জানান, এসএমই উদ্যোক্তা গ্রুপ, ক্লাস্টার ও বিভিন্ন সাব-সেক্টরের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে জামানতবিহীন স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং নতুন বাজার সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা উপকৃত হচ্ছেন। এই উদ্যোগ আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক উদ্যোক্তাকে সহায়তার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, শিল্পখাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এসএমই ফাউন্ডেশনকে কাঠামোগতভাবে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির বাজেট, মানবসম্পদ, গবেষণা সক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত অবকাঠামোকে আধুনিকায়ন করলে দেশের এসএমই খাত আরও শক্তিশালী হবে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অবস্থান সুদৃঢ় করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে এবং জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্যের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ভোক্তা বাজার বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম অবস্থানে পৌঁছাতে পারে। তিনি জানান, স্থানীয় বাজারের সম্প্রসারণ শিল্প স্থাপনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে এবং উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, দেশব্যাপী উদ্যোক্তাদের তথ্যসমৃদ্ধ সেবা দিতে একটি সমন্বিত ডাটাবেজ প্রয়োজন। খাতওয়ারী সেবা উন্নত করতে সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া এসএমই পণ্যের জন্য স্থায়ী বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন, যা উদ্যোক্তা ও ক্রেতা উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক হবে।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নুরুজ্জামান, নারী উদ্যোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০২৫–এর ছয়জন বিজয়ীর হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।
চলমান মেলায় দেশব্যাপী প্রায় সাড়ে ৩০০ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত। প্রস্তুত পোশাক, হস্ত ও কারুশিল্প, পাদুকা এবং চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতসহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও উদ্যোক্তাদের সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে মেলায় অংশ নিয়েছে।
১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান এ মেলায় উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি সম্ভাব্য বাজার সম্প্রসারণ, ব্যবসায়িক সংযোগ স্থাপন এবং প্রযুক্তি–ভিত্তিক সেবা গ্রহণের সুযোগ পাবেন, যা দেশের এসএমই খাতকে আরও গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে।


