দুর্নীতি দমন ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে রাজনৈতিক ইশতেহারে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দাবি

দুর্নীতি দমন ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে রাজনৈতিক ইশতেহারে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দাবি

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে স্পষ্ট অবস্থান নেই বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দুর্নীতি অব্যাহত থাকলেও এর পরিমাণ বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান টিআইবি এখনও প্রকাশ করেনি। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বক্তব্য তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে সঞ্চিত কাঠামোগত দুর্বলতা, প্রশাসনিক অনিয়ম ও জবাবদিহিহীন প্রক্রিয়া দুর্নীতিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। তার মতে, স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় দুর্নীতি প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি, ফলে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দেশের ৫৪ বছরের বাস্তবতা ও সাম্প্রতিক দীর্ঘমেয়াদি প্রশাসনিক সংকট কাটিয়ে তৎক্ষণাৎ দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরি করা কঠিন। এ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভরশীল।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ হলো প্রশাসন, রাজনৈতিক কাঠামো ও বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর সমন্বয়। এই সমন্বয় ছাড়া কেবল ঘোষণার ওপর ভিত্তি করে দুর্নীতির প্রবণতা হ্রাস পাবে না। তাই দুর্নীতির উৎস শনাক্ত করা, অভিযোগ অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বচ্ছ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহার প্রসঙ্গে টিআইবির আরেক কর্মকর্তা বলেন, ইশতেহারে দলগুলোর আর্থিক সক্ষমতা, পেশিশক্তির ব্যবহার এবং ধর্মকে রাজনীতিতে প্রয়োগের বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন। তার মতে, নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির মধ্যে এসব বিষয়ের অস্পষ্টতা ভোটারদের আস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। তিনি বলেন, ইশতেহার হলো রাজনৈতিক দলের নীতি ও কর্মপরিকল্পনার প্রতিফলন, তাই অস্পষ্টতা দূর করা এবং বাস্তবায়নযোগ্য অঙ্গীকার উপস্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকা উচিত। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, বিশেষ করে তদন্ত ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত না হলে দুর্নীতি দমনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আসবে না। এজন্য তিনি ইশতেহারে নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা, যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে নিয়োগ, সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা এবং সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় কঠোর তদারকির প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ পরিবেশ, সামাজিক সেবা এবং মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দুর্নীতি প্রতিরোধ অপরিহার্য। তিনি বলেন, দুর্নীতির প্রভাব কেবল আর্থিক ক্ষতিতেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস করে এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এই কারণেই রাজনৈতিক ইশতেহারে দুর্নীতি প্রতিরোধকে উচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের কিছু উদ্যোগ থাকলেও সেগুলো বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত তৎপরতা দেখা যায়নি। প্রশাসন এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে চলমান দুর্বলতা দূর করার বিষয়েও পর্যাপ্ত অগ্রগতি নেই। তার মতে, সরকার পরিবর্তন বা সাময়িক উদ্যোগের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারই দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করা যে তারা ক্ষমতায় গেলে সুশাসন নিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ নেবে। তিনি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক শাসন কাঠামো গঠনে দলগুলোর প্রতিশ্রুতিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া ছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে না। তারা মনে করেন, নির্বাচনি ইশতেহারে এসব বিষয় সুচিন্তিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করলে ভবিষ্যতে নীতিনির্ধারণে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এবং নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ