নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগে কওমি দাওরায়ে হাদিস সনদধারীদের নতুন যোগ্যতা স্বীকৃতি

নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগে কওমি দাওরায়ে হাদিস সনদধারীদের নতুন যোগ্যতা স্বীকৃতি

জাতীয় ডেস্ক

রোববার, ৭ ডিসেম্বর থেকে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃত দাওরায়ে হাদিস সনদধারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) পদে আবেদন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সংক্রান্ত নিয়ম সংশোধনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের একটি সীমাবদ্ধতা দূর হয়েছে বলে তিনি জানান। তাঁর verifed সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি বিষয়টি তুলে ধরেন।

তিনি জানান, এতদিন নিকাহ রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আলিম সনদধারী ব্যক্তিদের জন্য সুযোগটি সীমাবদ্ধ ছিল। তবে আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিধিমালা পর্যালোচনা করে নতুন করে যোগ্যতার পরিধি বাড়িয়েছে, যার ফলে কওমি সনদধারী যোগ্য ব্যক্তিরাও এখন সমানভাবে এই পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সংশোধিত নিয়ম অনুযায়ী, কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃত বোর্ডের দাওরায়ে হাদিস সনদকে আলিম বা সমমানের যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

নিকাহ রেজিস্ট্রার পদটি ধর্মীয় ও সামাজিক উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম নাগরিকদের বিবাহ নিবন্ধন, সংশ্লিষ্ট আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং নথিপত্র যাচাই–বাছাইয়ের মতো দায়িত্ব এই পদের মাধ্যমে পালিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশে নিবন্ধিত কওমি সনদধারীরা বিভিন্ন দাপ্তরিক ক্ষেত্রে সমমান বা যোগ্যতা প্রাপ্তির দাবিতে ছিলেন। বিশেষ করে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার পর নানা সরকারি ও বেসরকারি খাতে তাদের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নটি আলোচনায় আসে। নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় কওমি শিক্ষা ধারার আলেমদের জন্য কর্মসংস্থানের আরও একটি পথ উন্মুক্ত হলো।

বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা একটি দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় শিক্ষাপ্রণালী। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত ও দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা দর্শন অনুসরণ করে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানত মুসলিম জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় গড়ে উঠেছে। কওমি মাদ্রাসাগুলোতে প্রাথমিক থেকে উচ্চতর পর্যায় পর্যন্ত ইসলামি শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং সর্বোচ্চ স্তরের দাওরায়ে হাদিসকে আলেম হওয়ার পরিপূর্ণ যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশের ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় এই ধারাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের এ সংশোধনটি কেন প্রয়োজন হলো—এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিকাহ রেজিস্ট্রারের পদ শূন্য থাকা এবং স্থানীয়ভাবে যোগ্য আলেমদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য থেকেই বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়। বহু এলাকাতেই ইসলামি শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরা থাকলেও, পূর্বের যোগ্যতার সীমাবদ্ধতার কারণে তারা আবেদন করতে পারতেন না। সংশোধনের ফলে এখন বৃহত্তর একটি প্রার্থীসমাজ তৈরি হলো, যা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ধর্মীয় ও সামাজিক বাস্তবতায় কওমি সনদধারীদের বিচার-বিবেচনা, পারিবারিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান এবং সমাজের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের বিষয়টিও বিবেচনায় এসেছে বলে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ধর্মীয় বিধান, পারিবারিক আইন ও স্থানীয় সামাজিক কাঠামো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কওমি দাওরায়ে হাদিস সনদধারীরা সাধারণত হাদিস, ফিকহ ও ইসলামের মৌলিক বিধান সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন, যা এই দায়িত্ব পালনে সহায়ক হতে পারে।

নতুন সংশোধন বাস্তবায়নের ফলে ভবিষ্যতে নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দপ্তরগুলোকে আবেদন যাচাই, যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ এবং বিভিন্ন অঞ্চলে শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে নতুন করে নীতিমালা সমন্বয় করতে হতে পারে। পাশাপাশি নতুন প্রার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন ও নথিপত্র ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও জারি করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের উপযোগিতা নিশ্চিত করতে প্রার্থীদের জন্য অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। বিবাহ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নথিপত্র ব্যবস্থাপনা, আইনগত আপডেট, স্থানীয় সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন এবং প্রশাসনিক প্রটোকলের সঙ্গে সম্পৃক্ত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। তাই নতুন যোগ্যতার প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও একই প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে দায়িত্ব পালনে মানসম্মত দক্ষতা নিশ্চিত করা যাবে।

সামগ্রিকভাবে, আইন মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপ ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদধারীদের সরকারি দায়িত্ব পালনের সুযোগ বাড়িয়েছে এবং দেশের ধর্মীয় ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় একটি নতুন অন্তর্ভুক্তিমূলক ধাপ যুক্ত করেছে। নতুন যোগ্যতার প্রার্থীদের অংশগ্রহণের ফলে নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও বিস্তৃত হবে এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শূন্যপদ পূরণে কার্যকারিতা বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ