নির্বাচনের আগের রাতে সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত

নির্বাচনের আগের রাতে সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং একই দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গণভোটকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশব্যাপী ভোটের সার্বিক প্রস্তুতিকে চূড়ান্ত করার পর্যায়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, ভোটের আগের রাতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ প্রয়োজনীয় সব নির্বাচনি সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

রোববার ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের দশম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজনের কারণে লজিস্টিক ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। সেই বিবেচনায় কমিশন মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ও পূর্ববর্তী পরীক্ষামূলক ভোট পরিচালনার অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচনি সামগ্রীর নিরাপদ পরিবহন এবং কেন্দ্রে সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিত করা কমিশনের অন্যতম অগ্রাধিকার। সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হওয়ায় ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, ফরম, সিল, ভোটার তালিকা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী সময়মতো পৌঁছে দিতে কেন্দ্রভিত্তিক বিশদ পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি জানান, অতীতের মতো ভোটের আগের রাতে এসব সামগ্রী কেন্দ্রগুলোতে হস্তান্তর করা হবে, যাতে ভোটের দিন সকালে কোনো বিলম্ব বা বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা না থাকে।

তিনি আরও জানান, একই দিনে দুটি ভোট আয়োজনের কারণে কোনো কেন্দ্রে ভোটারের চাপ বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে প্রয়োজন হবে, সেখানে অতিরিক্ত সিক্রেট বুথ স্থাপন করা হবে, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ব্যালট প্রদান করতে পারে। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ ও ভোটার-ঘন এলাকায় বুথ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আগাম মূল্যায়ন করা হয়েছে।

কমিশনের সভায় দেশব্যাপী ভোটগ্রহণের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা এবং প্রশাসনিক সমন্বয়সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। সানাউল্লাহ জানান, মাঠপর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য ও মতামতের ভিত্তিতে কমিশন বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করছে। মক ভোটিং আয়োজনের অভিজ্ঞতাও এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এর মাধ্যমে ভোটের দিন সম্ভাব্য পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে কমিশন আরও স্পষ্ট ধারণা পেয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটকক্ষের বিন্যাস, বুথের সংখ্যা, সারিবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ ও প্রবেশ-প্রস্থান পথের নিরাপত্তা ঘিরে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব কক্ষে ভোটারের ভিড় বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে পূর্বেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভোটারদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ব্যালট পেপার মুদ্রণ, নির্বাচনি সামগ্রী প্রস্তুত, পরিবহন পরিকল্পনা, কর্মকর্তা নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম প্রায় শেষ করেছে। দেশজুড়ে ভোটের দিন যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য কমিশন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় করছে।

সানাউল্লাহ আরও বলেন, নির্বাচনের দিন ভোটারদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কেন্দ্রভিত্তিক দায়িত্বের পাশাপাশি আশপাশের এলাকায় টহল জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে সহজে প্রবেশ ও নিরাপদভাবে ভোটদান নিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে সব জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও সুসংহত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন কমিশনার। তিনি বলেন, ভোটের আগের রাতে সব সামগ্রী কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে গেলে নির্বাচন দিনের বড় ধরনের চাপ কমে যায় এবং ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার সুযোগ বাড়ে।

কমিশনের প্রস্তুতি, লজিস্টিক পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে এই ব্যাখ্যা দিয়ে নির্বাচন কমিশনার জানান, দুইটি বড় নির্বাচন একই দিনে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং বাকি প্রস্তুতিগুলোও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ