নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত

জেলা প্রতিনিধি

সোনাইমুড়ীতে আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি দ্রুতগতির বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী এক কিশোরসহ দুই তরুণ গুরুতর আহত হয়েছেন। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে কাটালী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল চালক ফারহান শাহরিয়ার বিজয়ের ডান হাত কাঁধ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সঙ্গে থাকা আরেক আরোহীর পা ভেঙে যায়।

পুলিশ ও স্থানীয়দের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সোনাইমুড়ী থেকে কুমিল্লামুখী আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলটি যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাস অতিরিক্ত গতিতে এসে মুখোমুখি ধাক্কা দেয়। সংঘর্ষের তীব্রতায় দুই আরোহী সড়কের পাশে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনা-পরবর্তী মুহূর্তে আশপাশের লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে ফারহান শাহরিয়ার বিজয়কে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার গুরুতরতা বিবেচনায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানা যায়, আহত কিশোরের ডান হাত সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছায় এবং তৎক্ষণাৎ বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রয়োজন হওয়ার কারণে তাকে ঢাকায় নেওয়া জরুরি হয়। অপর আহত তরুণও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য চিকিৎসা চলছে।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার জানান, আহত কিশোরের অবস্থা জটিল হওয়ায় দ্রুত উচ্চতর চিকিৎসা কেন্দ্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে ভবিষ্যতে পুনর্গঠনমূলক চিকিৎসার সম্ভাবনা থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত করে দ্রুত রোগীকে রেফার করে দেয়।

দুর্ঘটনার বিষয়ে সড়ক পুলিশের প্রাথমিক বক্তব্য থেকে জানা যায়, স্থানীয় থানা পুলিশের মাধ্যমে তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাসটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বাসটি কোন পরিবহনের ছিল, কী কারণে নিয়ন্ত্রণ হারায় বা বেপরোয়া গতিতে চলছিল—এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তারা তদন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবে এবং সড়ক দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ, চালকের পরিচয়, বাসের নিবন্ধন তথ্যসহ সবকিছু যাচাই করবে।

সড়ক দুর্ঘটনার তদন্তে সাধারণত যানবাহনের গতি, ব্রেকব্যবস্থা, মহাসড়কের অবস্থা, চালকের দক্ষতা ও ক্লান্তি, সড়কে আলোকসজ্জা এবং আশপাশের পরিবেশকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ ঘটনায়ও একইভাবে সব তথ্য সংগ্রহ করে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তদন্তে বাসটি চিহ্নিত হলে চালক ও পরিবহন মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়দের দাবি, আঞ্চলিক মহাসড়কের ওই অংশটিতে নিয়মিতভাবে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চলাচল করে, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। এলাকাবাসীর মতে, এ অঞ্চলে সড়ক নজরদারি বৃদ্ধি, গতিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্থাপন এবং নিয়মিত ট্রাফিক তদারকি দুর্ঘটনা কমাতে সাহায্য করতে পারে। পূর্বে একই এলাকায় আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটায় স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে সড়ক নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়ে আসছেন।

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ১৭ বছরের ফারহান শাহরিয়ার বিজয় সোনাইমুড়ী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ঘটনার আকস্মিকতায় তারা গভীরভাবে শোকাহত ও উদ্বিগ্ন হলেও চিকিৎসা প্রক্রিয়া নিয়ে আশাবাদী। পরিবারটি দ্রুত বাসচালককে শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাণহানি ও পঙ্গুত্বের কারণ হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, সড়কের অনিরাপদ অবকাঠামো, চালকের অসতর্কতা এবং তদারকির অভাবই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর আইনপ্রয়োগ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত যান্ত্রিক তদারকি এবং পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা জরুরি।

সোনাইমুড়ীর এই দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তদন্ত সম্পন্ন হলে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে তারা প্রস্তুত। আহতদের চিকিৎসা এগিয়ে চলছে এবং তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সারাদেশ