পেঁয়াজের বাজারে অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির তদন্তের নির্দেশ

পেঁয়াজের বাজারে অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির তদন্তের নির্দেশ

অর্থনীতি ডেস্ক

দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কেজিতে প্রায় ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানান, বাজারে কোনো ধরনের বাস্তব সংকট না থাকা সত্ত্বেও এ মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় এর পেছনে কারসাজির সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রয়োজনীয়তাও তিনি তুলে ধরেন। রোববার (৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

কৃষি উপদেষ্টা বলেন, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই এবং সারসহ অন্যান্য প্রধান কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকার পরও বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি জানান, বাজারে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি দেখা দিলে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ী, পাইকার ও আড়তদারদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়ে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রয়োজনে এ বিষয়ে পৃথক তদন্ত পরিচালনা করবে।

বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতোমধ্যে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। তার মতে, আমদানি উন্মুক্ত হলে বাজারে সরবরাহ আরও বাড়বে এবং অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি কমবে। তিনি বলেন, বাজারে পেঁয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি প্রায় ৭০ টাকার মধ্যে থাকলে তা ভোক্তা ও কৃষক উভয়ের জন্যই উপযোগী ভারসাম্য সৃষ্টি করে। এর বেশি দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করে, আর অতিরিক্ত দাম কমে গেলে কৃষকদের উৎপাদন খরচ উঠে আসে না—ফলে বাজারে একটি সহনীয় মূল্য কাঠামো বজায় রাখা জরুরি।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও উল্লেখ করেন, বাজারে যোগসাজশ বা অনৈতিক মূল্য নির্ধারণের প্রমাণ পাওয়া গেলে কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো কর্মকর্তা বাজারে অস্বচ্ছতা বা অনিয়মে জড়িত থাকলে তাদের চাকরি থাকবে না বলে তিনি সতর্ক করেন। ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক কারসাজি মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও তিনি জানান। পাশাপাশি বাজার পরিস্থিতি মনিটরিং ও তথ্য সংগ্রহ জোরদার করার ওপর জোর দেন তিনি।

বর্তমান কৃষি উৎপাদন পরিস্থিতি তুলে ধরে উপদেষ্টা জানান, দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে ফলন ভালো হয়েছে। ধান, সবজি ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন পরিস্থিতি সন্তোষজনক হওয়ায় বাজারে সবজিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে সরবরাহ আরও বাড়লে সবজির দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে দাম যেন এতটা কমে না যায় যার ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়—এ বিষয়টিও সরকার বিবেচনায় রাখছে।

আলু চাষিদের পরিস্থিতির প্রসঙ্গে তিনি জানান, চলতি মৌসুমে অনেক চাষি আলুর বাজারদরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলুর জাত উন্নয়ন ও রপ্তানি সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। দেশের বেশির ভাগ আলুর জাত আন্তর্জাতিক মানে পর্যাপ্ত প্রতিযোগিতামূলক নয় বলে রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিদের সহায়তার জন্য ভর্তুকি বা প্রণোদনার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে এবং প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।

কৃষি উপদেষ্টা সারের যৌক্তিক ব্যবহারের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন খাত—বিশেষ করে মৎস্যচাষ এবং কিছু অ-কৃষি ক্ষেত্র—অতিরিক্ত সার ব্যবহারের প্রবণতা দেখা গেছে, যা উৎপাদন ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। তাই সারের অপচয় নিয়ন্ত্রণ, জমির উর্বরতা বজায় রাখা এবং কৃষিখাতে টেকসই উৎপাদন কাঠামো নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতা ও তদারকি বাড়ানোর নির্দেশনা দেন তিনি।

প্রশাসনিক চলাচল ও বদলি পদ্ধতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জাহাঙ্গীর আলম জানান, সাম্প্রতিকভাবে ওসি ও এসপি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের লটারির মাধ্যমে বদলি করা হয়েছে। একইভাবে কৃষি কর্মকর্তাদেরও লটারিভিত্তিক বদলির উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে বদলির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে দুইজন কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তার মতে, অনেক কর্মকর্তা সুবিধাজনক স্থানে পোস্টিং পাওয়ার চেষ্টা করেন, যা কখনো কখনো প্রশাসনিক ভারসাম্য ব্যাহত করে। এ কারণে লটারিভিত্তিক বদলি ব্যবস্থা কার্যকর করা হলে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে এবং প্রশাসনিক দক্ষতাও বাড়বে।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ