জাতীয় ডেস্ক
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের সৌজন্য সাক্ষাৎ আজ রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কমিশনের নিয়মিত সভা শেষে তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে এ সাক্ষাতে অংশ নেবেন। নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা ও চলমান নির্বাচনী প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে এ সাক্ষাৎকে গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য এ সাক্ষাৎ মূলত সৌজন্য বৈঠক হলেও এতে কমিশনের সামগ্রিক প্রস্তুতি, নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা ও প্রশাসনিক সমন্বয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি বলেন, কমিশন নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের নির্বাহী নেতৃত্বের সঙ্গে এটি প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ, যা ভবিষ্যতে নির্বাচন আয়োজনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমন্বয় আরও কার্যকর করবে। এছাড়া আগামী ১০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচিও নির্ধারিত রয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, এ সাক্ষাতে সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন, তফসিল ঘোষণার সময়সীমা, নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সহায়তা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মাঠকর্মীদের প্রস্তুতি এবং সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়। যদিও এটি একটি আনুষ্ঠানিক সৌজন্য সাক্ষাৎ, তারপরও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংবেদনশীলতা বিবেচনায় বৈঠকটিকে নীতিগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। দুটি বৃহৎ জাতীয় কার্যক্রম একসঙ্গে আয়োজনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতি, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তার ব্যবস্থা, ভোটার তথ্য যাচাই, নির্বাচন সামগ্রী পরিবহন ও নিরাপত্তার পরিকল্পনা। নির্বাচন কমিশন এসব বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে ইতোমধ্যে প্রাথমিক সমন্বয় শুরু করেছে।
নির্বাচন কমিশনের নতুন নেতৃত্ব ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর শপথ নেয়। সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে কমিশনের চার নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, তাহমিদা আহমদ এবং আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। কমিশনের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন সচিব আখতার আহমেদ। নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নির্বাচনের প্রস্তুতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় এবং কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আসন্ন নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক ও কারিগরি দিক থেকে একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে দৃঢ় সমন্বয় অপরিহার্য। আজকের সৌজন্য সাক্ষাতের মাধ্যমে কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে কর্মসম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া বৈঠকে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন, নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও গণমাধ্যমের স্বাধীন কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা হতে পারে। দেশব্যাপী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিশেষ করে দুর্বল ও দুর্গম এলাকার ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু রাখা কমিশনের অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তফসিল ঘোষণা ও ভোটগ্রহণের মধ্যবর্তী সময়টিকে কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে। এই সময়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ডেটাবেজ যাচাই, মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও যাচাই-বাছাই, আপিল নিষ্পত্তি এবং প্রতীক বরাদ্দসহ বিভিন্ন ধাপে দ্রুত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন হবে। এ কারণে কমিশন সর্বস্তরের প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছে।
সিইসির নেতৃত্বে কমিশনের এ সৌজন্য সাক্ষাৎ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিগত ও প্রশাসনিক সহায়তা প্রাপ্তির প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সাক্ষাতে আলোচনা হওয়া বিষয়গুলোই আগামী কয়েক সপ্তাহে কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনার দিকনির্দেশনা নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


