খেলাধুলা ডেস্ক
রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত গোল উৎসব উপহার দিয়ে লা লিগায় গুরুত্বপূর্ণ জয় তুলে নিয়েছে বার্সেলোনা। অ্যান্ডালুসিয়ার এই ক্লাবের মাঠে ৫–৩ গোলের এই জয়ে কাতালান দলটি শুধু তিন পয়েন্টই নিশ্চিত করেনি, লিগ টেবিলে নিজেদের শীর্ষ অবস্থানও আরও শক্ত করেছে। পুরো ম্যাচজুড়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল, ফেররান তোরেসের হ্যাটট্রিক এবং তরুণদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এই জয়ের মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।
ম্যাচের শুরুতেই স্বাগতিক বেটিস এগিয়ে যায়। মাত্র ছয় মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল অ্যান্টোনি কাছ থেকে নেওয়া শটে দলকে এগিয়ে দেন। দ্রুত গোল হজমের ধাক্কা কাটিয়ে বার্সেলোনা খেলায় ফিরে আসতে শুরু করে। হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা বল দখলে আধিপত্য বজায় রেখেও শুরুতে কার্যকর আক্রমণ গড়তে পারছিল না। তবে একবার ছন্দ খুঁজে পাওয়ার পর ম্যাচের রূপ বদলে যায় দ্রুত।
১১ ও ১৩ মিনিটে পরপর দুটি গোল করে ফেররান তোরেস বার্সাকে এগিয়ে দেন। প্রথম গোলটি আসে জুলস কুন্দের পাস থেকে, যেখানে বক্সের মুখে পেয়ে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড নিখুঁত শটে সমতার গোল করেন। দুই মিনিট পর রুনি বার্দগির পাঠানো ক্রসে দুর্দান্ত ভলিতে দ্বিতীয় গোল করেন তোরেস, যা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বার্সেলোনার দিকে টেনে আনে। এরপর থেকেই অতিথিরা আক্রমণে আরও ধার বাড়িয়ে দেয়।
৩১ মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন রুনি বার্দগি। মাঝমাঠ থেকে পেদ্রির থ্রু বল ধরে ২০ বছর বয়সী এই উইঙ্গার প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে অনবদ্য শটে গোল করেন। তরুণ খেলোয়াড়দের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স বার্সেলোনার সাম্প্রতিক ফর্মে বড় ভূমিকা রাখছে, এবং এই ম্যাচে সেটির আরেকটি প্রমাণ মেলে।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে তোরেস তার হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করেন। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার শট প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে জালে প্রবেশ করে। এটি বার্সেলোনার জার্সিতে তার দ্বিতীয় এবং পেশাদার ক্যারিয়ারের তৃতীয় হ্যাটট্রিক। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই ৪–১ গোলের লিড ম্যাচটিকে বার্সার জন্য অনেকটাই সহজ করে দেয়।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণাত্মক ফুটবল বজায় রাখে বার্সেলোনা। ৫৬ মিনিটে নিজেদের বক্সে হ্যান্ডবল করায় বেটিসের বিপক্ষে পেনাল্টি পায় অতিথিরা। স্পট কিকে ঠাণ্ডা মাথায় গোল করেন লামিনে ইয়ামাল। মাত্র ১৮ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ তারকা ইতোমধ্যেই সিনিয়র দলকে নির্ভরতার জায়গা করে দিয়েছেন। তার গোল বার্সাকে ৫–১ ব্যবধানে এগিয়ে দেয় এবং ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিশ্চিত করে।
তবে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা বেটিস শেষদিকে লড়াই ছাড়েনি। ৮৫ মিনিটে দিয়েগো লরেন্তে ব্যবধান কমান। কয়েক মিনিট পর কুন্দের ফাউলের ফলে পাওয়া পেনাল্টি থেকে কুচো হার্নান্দেজ দলের তৃতীয় গোলটি করেন। এই দুই গোল ম্যাচের শেষ দিকে রোমাঞ্চ সৃষ্টি করলেও ব্যবধান কমানোর বাইরে যাওয়ার সুযোগ পায়নি স্বাগতিক দলটি।
পুরো ম্যাচে বল দখলে বড় ব্যবধান থাকলেও শট নেওয়ার দিক দিয়ে বেটিস এগিয়ে ছিল। স্বাগতিকরা ১৬টি শট নেয়, যার মধ্যে ১০টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে বার্সেলোনা ১৩টি শটের মধ্যে ৮টি লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয়। কার্যকর আক্রমণ এবং ট্যাকটিক্যাল শৃঙ্খলতা ফ্লিকের দলকে প্রয়োজনীয় তিন পয়েন্ট এনে দেয়।
এই জয়ে ১৬ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও শক্ত করেছে বার্সেলোনা। তাদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। মৌসুমের অর্ধপথে এসে পয়েন্ট ব্যবধান বজায় রাখা বা আরও বাড়ানোর সুযোগ এখন বার্সেলোনার সামনে। অন্যদিকে বেটিসের জন্য এই হার লিগ টেবিলে অবস্থান ধরে রাখার লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে বার্সেলোনার আক্রমণভাগের ধারাবাহিক কার্যকারিতা কোচ হ্যান্সি ফ্লিকের কৌশলগত পরিকল্পনার সফলতা ইঙ্গিত করছে। পাশাপাশি তরুণ এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা দলটি মৌসুমের পরবর্তী ম্যাচগুলোতেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পারফরম্যান্স বজায় রাখতে পারবে কি না, এখন তা-ই দেখার অপেক্ষা।


