খামারবাড়িতে আয়োজিত বিএনপির ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনের অংশ হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল, যা দলটির চলমান রাজনৈতিক পরিকল্পনা উপস্থাপনার একটি ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মভীরু হলেও এই ধর্মীয় মূল্যবোধকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক বিভাজন সৃষ্টির প্রচেষ্টা জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তার মতে, স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় বিভিন্ন ধর্ম, মত ও শ্রেণির মানুষ একই লক্ষ্য নিয়ে একত্র হয়েছিল এবং সে ভিত্তিতেই বাংলাদেশের জন্ম। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাকে তিনি জাতির দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার প্রধান পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক স্থাপত্যের জন্য সমন্বিত সমাজব্যবস্থা অপরিহার্য।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিএনপির মহাসচিব দাবি করেন যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় বিভাজন বাড়ানোর অপচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ধরনের প্রবণতা দমন করতে রাজনৈতিক দলগুলোসহ নাগরিক সমাজের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি। তার বক্তব্য অনুযায়ী, বিভাজনমূলক রাজনীতি দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় ঐক্যকে দুর্বল করতে পারে এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, দলকে সামনে এগিয়ে নিতে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও সক্রিয় হওয়া জরুরি। তার বক্তব্যে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সংগঠনভিত্তিক কার্যক্রমে যুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বিএনপির ৩১ দফা রাজনৈতিক প্রস্তাবনা গ্রামীণ পর্যায়ে প্রত্যাশিত মাত্রায় প্রচার হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং ছাত্র সংগঠনকে এ ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
ছাত্রদলকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগঠনের কার্যক্রম বিস্তারের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে এবং তা সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে দলের কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে না পারার একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তিনি মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশে ছাত্র সংগঠনের কার্যকর উপস্থিতি রাজনৈতিক চিন্তাচর্চা ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই ছাত্র সংগঠনকে সুসংগঠিত করা এবং শিক্ষাঙ্গনে কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি বলে তিনি মত দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আসন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার নানা দিক তুলে ধরেন। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি সংগঠিত কার্যপরিকল্পনা তৈরি এবং গ্রামীণ পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি দলটির কৌশলগত অগ্রাধিকারের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলেন, চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে গণসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় সহনশীলতা, সামাজিক সম্প্রীতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা—এই তিনটি বিষয় ঘন ঘন উঠে আসছে। ধর্মীয় বিষয়গুলোর রাজনৈতিক ব্যবহার এবং সামাজিক বিভাজন প্রসঙ্গে উদ্বেগ বাড়ায় বিভিন্ন পক্ষ থেকেই ঐক্যবদ্ধ জাতীয় মনোভাবের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি এবং তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ও আলোচনায় রয়েছে।
অনুষ্ঠানটি বিএনপির দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক পরিকল্পনা উপস্থাপনার একটি ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলটির নেতারা মনে করছেন, ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে সংগঠনের প্রতিটি স্তরে সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যে দেশের সার্বিক গণতান্ত্রিক কাঠামো, নির্বাচনব্যবস্থা, এবং নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে সামগ্রিক অংশগ্রহণ ও ঐক্যের বার্তা তুলে ধরা হয়।


