ভোলায় সেতু নির্মাণ ও গ্যাস ব্যবহারে স্থানীয় অগ্রাধিকার নিশ্চিতের ঘোষণা

ভোলায় সেতু নির্মাণ ও গ্যাস ব্যবহারে স্থানীয় অগ্রাধিকার নিশ্চিতের ঘোষণা

জেলা প্রতিনিধি

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জে আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান বলেছেন, ভোলা সেতু নির্মাণের কাজ আগামী সরকার এগিয়ে নেবে এবং ভোলার গ্যাস স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় মীরগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ বক্তব্য দেন।

নতুন সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে বরিশাল ও মেঘনা পাড়ের কয়েকটি উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পাশাপাশি নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা জানান, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে স্বচ্ছতা, সময়ানুবর্তিতা এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান বলেন, ভবিষ্যৎ সরকার যে-ই গঠন করুক না কেন, চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখতে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে, এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, একটি অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হবে।

তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে বিভিন্ন কোন্দল ও সমন্বয়ের অভাব প্রায়ই অগ্রগতি ব্যাহত করে এবং এর ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতি রোধে স্থানীয় প্রশাসন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং এলাকাবাসীর মধ্যে সুসমন্বয় জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন। সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এলাকাবাসী যেমন দ্রুত সুবিধা পাবে, তেমনি সরকারি ব্যয়ও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় চাঁদাবাজি, কাজ বণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং স্থানীয় চাপের কারণে বিলম্ব ঘটে। এতে শুধু নির্মাণের মান ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, বরং প্রকল্প শেষ করতে নির্ধারিত সময়ও বাড়তে থাকে। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থেকে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তার মতে, একটি সমন্বিত তদারকি ব্যবস্থা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে প্রকল্প সঠিক মান ও সময়ে শেষ করা সম্ভব হবে।

আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মীরগঞ্জ সেতু নির্মাণে সরকার প্রায় ১ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বরিশাল অঞ্চল এবং মেঘনা পাড়ের মুলাদী ও হিজলা উপজেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পাশাপাশি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলাও পরোক্ষভাবে উন্নত যোগাযোগ সুবিধার আওতায় আসবে। বর্তমানে এ অঞ্চলগুলোর সাথে বরিশালের যোগাযোগে নদীপথের ওপর নির্ভরতা বেশি থাকায় সময় ও ভোগান্তি দুটোই বাড়ে। নতুন সেতু নির্মাণ হলে এসব সমস্যা লাঘব হবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সেতুটি নির্মাণের ফলে স্থানীয় কৃষি, বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে সুবিধাজনক হবে। বিশেষ করে মুলাদী, হিজলা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বরিশাল শহরসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাঠাতে সক্ষম হবেন। এর ফলে পরিবহন ব্যয় কমতে পারে এবং বাজারে পণ্যের সরবরাহও আরও স্থিতিশীল হবে।

এ ছাড়া নতুন সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও অন্যান্য জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত সহজ হবে। সরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে জনগণের সময় ও খরচ কমে আসবে বলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করছেন।

অন্যদিকে, ভোলার গ্যাস স্থানীয় জনগণের ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে উপদেষ্টারা জানান, গ্যাস সম্পদ ব্যবহারে স্থানীয় অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা হলে অঞ্চলের শিল্পায়ন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টি সহজ হবে। এতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সেতু নির্মাণ ও জ্বালানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা—উভয় উদ্যোগকে আলোচনায় এনে বক্তারা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। তারা আশা করেন, সেতু নির্মাণ শেষ হলে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হবে এবং ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে পিছিয়ে থাকা এলাকাগুলো মূলধারার উন্নয়নে যুক্ত হবে।

শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ