জাতীয় ডেস্ক
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে মাগুরা উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, মানবসম্পদ উন্নয়নের বিকল্প নেই এবং এ লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, বৈশ্বিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মরত অনেক শ্রমিক পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক শিক্ষা না থাকার কারণে তুলনামূলক কম মজুরি পান। এ পরিস্থিতি পরিবর্তনে শিক্ষার মানোন্নয়ন জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আধুনিক দক্ষতা ও বাজার উপযোগী প্রশিক্ষণ দিতে পারলে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে এবং দেশের রেমিট্যান্স আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন হলো জাতীয় অগ্রগতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে স্কুল পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞান, ভাষা দক্ষতা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ভিত্তি শক্তিশালী করতে হয়। এজন্য জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতকে অধিক অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি জোর দেন।
শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, উচ্চশিক্ষা এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ইংরেজির ওপর দক্ষতা তৈরি হলে দেশের যুবসমাজ আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে। তিনি শিক্ষকদের অনুরোধ জানান, পাঠদানে ভাষা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।
পরিদর্শনকালে মাগুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামোর বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বিদ্যালয়ের ভবন, শ্রেণিকক্ষ, বিজ্ঞানাগার ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার সুবিধা—এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তথ্য নেন। তিনি জানান, শিক্ষার পরিবেশ উন্নত হলে শিক্ষার্থীরা আরও উৎসাহ নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। এসময় তিনি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, গ্রামীণ এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। অনেক স্কুলে এখনো পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি, প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম বা স্পোর্টস সুবিধা নেই। এসব উন্নয়ন ঘটাতে পারলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও সমান সুযোগ পাবে, যা জাতীয় উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ভোকেশনাল শিক্ষা এবং বিশেষ দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, এসব উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বিদ্যালয় পর্যায়েই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান দৃঢ় করতে হবে।
তিন দিনের সরকারি সফরের শেষ দিনে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিদ্যালয়ের স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু পাঠদান নয়, ব্যক্তির চরিত্র গঠন, মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব দিক মাথায় রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সামগ্রিক উন্নয়ন প্রয়োজন।
এ সফরের অংশ হিসেবে এর আগে শুক্রবার তিনি রংপুরের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান পরিদর্শন করেন এবং শনিবার রংপুর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে আঞ্চলিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং জনসেবা বিশেষ করে শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানবসম্পদ উন্নয়নের উদ্যোগ জোরদার হলে জাতীয় অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য ও সফরসূচির আলোকে স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষার গুণগত উন্নয়নকে কেন্দ্র করে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ ও চলমান উদ্যোগগুলোর অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়লে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও গতিশীল হতে পারে।


