মার্কিন নীতির প্রতি ভারত-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে: পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা

মার্কিন নীতির প্রতি ভারত-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে: পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও পররাষ্ট্রনীতি–সংক্রান্ত অবস্থানের কারণে ভারত ও রাশিয়ার কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল রুবিন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটন–নয়াদিল্লি সম্পর্ককে জটিল করে তোলায় মস্কো নয়াদিল্লির প্রতি জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টি নতুনভাবে নিশ্চিত করেছে। রুবিন দাবি করেন, মার্কিন কৌশলগত অস্থিরতার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে।

রুবিনের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ মার্কিন-ভারত সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের নীতি পরিবর্তনের কারণে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তার দাবি, ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অস্পষ্ট হয়ে পড়ার সুযোগে রাশিয়া নয়াদিল্লির সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা আরও জোরদার করেছে। এই পরিস্থিতিতে পুতিন নয়াদিল্লিকে জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা ভবিষ্যতে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

ভারতের জন্য জ্বালানি সরবরাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত উপাদান উল্লেখ করে রুবিন বলেন, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে দেশটির স্থিতিশীল জ্বালানি নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। ভারতের চাহিদা বিবেচনায় রাশিয়া ইতোমধ্যে তেল, গ্যাস ও কয়লা সরবরাহ বাড়িয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেন, ওয়াশিংটন নিজেও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বজায় রেখে ভারতকে রুশ তেল কেনা নিয়ে নীতিগত পরামর্শ দিচ্ছে, যা তার মতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। রুবিন মনে করেন, কোনো বিকল্প বাজার না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রও রাশিয়া থেকে কিছু পণ্য আমদানি করে, ফলে ভারতকে নীতি নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত।

তিনি আরও বলেন, ভারতের জনগণ নিজেদের স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার নির্বাচন করেছে। একটি জনবহুল ও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে ভারতে স্বল্পমূল্যের জ্বালানি সরবরাহ অত্যাবশ্যক। তাই যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতকে নির্দিষ্ট নীতি অনুসরণে উৎসাহিত করতে চায়, তবে তার আগে পর্যাপ্ত জ্বালানি বিকল্প তৈরি করতে হবে। রুবিন মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কম দামে জ্বালানি সরবরাহ করা সম্ভব না হলে ভারতকে নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।

ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর সাম্প্রতিক শুল্ক আরোপের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। গত আগস্টে রুশ তেল আমদানি অব্যাহত রাখার কারণে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন করে চাপের মুখে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক অংশীদারত্বকে দীর্ঘমেয়াদে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে ডিসেম্বরের শুরুতে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ২৩তম ভারত–রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন গতিতে এগিয়ে নেয়। সম্মেলনে অংশ নিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারতে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা গভীর করার বিষয়ে আলোচনা হয়। পুতিন বলেন, ভারতের জ্বালানি চাহিদা পূরণে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে নির্ভরযোগ্যভাবে তেল, গ্যাস ও কয়লা সরবরাহ করে আসছে এবং এটি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

ভারতের দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বিবেচনায় নিয়ে পুতিন উল্লেখ করেন, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা তাদের যৌথ লক্ষ্য। তিনি বলেন, রাশিয়া ভারতের উন্নয়ন–কেন্দ্রিক প্রকল্পগুলোতে সহযোগিতা বাড়াতে প্রস্তুত। দুই দেশের নেতারা বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়েও আলোচনা করেন।

দিল্লিতে সফর শেষে পুতিন দেশে ফিরে গেলে তাকে বিদায় জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। বিশ্লেষকদের মতে, চলমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জ্বালানিনির্ভর অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় ভারত–রাশিয়া সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও বহুমাত্রিক হতে পারে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র–ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ওয়াশিংটনের নীতি–অবস্থানের স্থিতিশীলতা ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর, যা ভবিষ্যৎ ভূরাজনৈতিক সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ