খেলাধুলা ডেস্ক
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগে (আইএলটি২০) অভিষেক ম্যাচে বল হাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখালেও দলের জয় নিশ্চিত করতে পারেননি বাংলাদেশের পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। ৬ ডিসেম্বর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ম্যাচে গালফ জায়ান্টসের বিপক্ষে দুবাই ক্যাপিটালস ১৬০ রানের পুঁজি গড়লেও প্রতিপক্ষ ৭ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্য অতিক্রম করে নেয়।
অভিষেক ম্যাচে মোস্তাফিজ প্রথমেই দলকে সাফল্য এনে দেন। তার কাটার-নির্ভর প্রথম বলেই আউট হন গালফ জায়ান্টসের ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ওভারে ১১ রান খরচ হলেও উইকেট এনে দলকে ভালো সূচনা উপহার দেন তিনি। এর আগে ফিল্ডিংয়েও দুটি ক্যাচ ধরে অবদান রাখেন এই বাঁহাতি পেসার।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে দুবাই ক্যাপিটালস নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬০ রান সংগ্রহ করে। দলের ব্যাটাররা ইনিংসের মাঝামাঝি সময়ে রান তুললেও শেষের দিকে বড় জুটি গড়তে ব্যর্থ হওয়ায় স্কোর তুলনামূলকভাবে মধ্যম পর্যায়ে থেমে যায়। গালফ জায়ান্টসের বোলাররা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে ক্যাপিটালসের রান বাড়ানোর গতিতে বাধা সৃষ্টি করেন, যা শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফলাফলে প্রভাব ফেলে।
গালফ জায়ান্টসের রান তাড়ার শুরুতে মোস্তাফিজ দ্বিতীয়বার সুযোগ তৈরি করেন পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে। সে ওভারে জেমস ভিন্সের ক্যাচ মিস করেন ডেভিড উইলি, যা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায়। ক্যাচটি হাতছাড়া হওয়ার পর ভিন্সকে আর থামানো যায়নি; তিনি পরবর্তীতে অর্ধশতক পূর্ণ করে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেন। ওই ওভারে মোস্তাফিজ ১০ রান খরচ করলেও জয়ের পথ আরও চওড়া করে দেন প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা।
১২তম ওভারে আবারও আক্রমণে এসে দ্বিতীয় উইকেট নেন মোস্তাফিজ। সে সময় পর্যন্ত দারুণ ছন্দে থাকা পাতুম নিশাঙ্কাকে মাত্র ২ রানে ফিরিয়ে দেন তিনি। নিশাঙ্কা আগেই অর্ধশতক পূর্ণ করেছিলেন এবং তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং গালফ জায়ান্টসকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যায়। মোস্তাফিজের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দল কিছুটা আশা পেলেও উইকেটের পতনের পরও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ প্রতিপক্ষ ব্যাটাররাই ধরে রাখেন।
১৬তম ওভারে আবারও দর্শনীয় নিয়ন্ত্রণ প্রদর্শন করেন মোস্তাফিজ। এই ওভারে মাত্র ৩ রান দেন তিনি। তার প্রথম দুই ওভারে ২১ রান খরচ হলেও শেষ দুই ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে বোলিং পরিসংখ্যানকে বেশ ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলেন। সবমিলিয়ে ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া ইনিংসটি পেসারের জন্য ছিল আইএলটি২০–তে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর মতো পারফরম্যান্স।
মোস্তাফিজের বোলিং কোটা শেষ হওয়ার সময় গালফ জায়ান্টসের প্রয়োজন ছিল ২৪ বলে ২৯ রান। ম্যাচের ওই পর্যায়ে পরিস্থিতি ব্যাটারদের অনুকূলে থাকায় লক্ষ্য পূরণে বিশেষ চাপে পড়তে হয়নি তাদের। ইনিংসের বড় অংশজুড়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে নিশাঙ্কা ৩১ বলে ৬৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন। ইনিংসের এ ধারা বজায় রেখে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যেতে তার ভূমিকা ছিল মুখ্য।
ম্যাচের সার্বিক চিত্রে দেখা যায়, দুবাই ক্যাপিটালসের বোলার হিসেবে মোস্তাফিজ সফল হলেও দলীয় বোলিং ইউনিটের সামগ্রিক পরিকল্পনা ও ফিল্ডিংয়ে ঘাটতি থাকায় জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ মিস ও শেষ দিকে সঠিক লাইন-লেন্থ ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা সহজেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এতে দলের পক্ষে ম্যাচ ঘুরিয়ে আনা কঠিন হয়ে যায়।
আইএলটি২০–তে নতুন দলে প্রথম ম্যাচে মোস্তাফিজের এমন পারফরম্যান্স ভবিষ্যতের ম্যাচগুলোতে তার ওপর প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ডেথ ওভারে তার নিয়ন্ত্রিত বোলিং সামনের ম্যাচগুলোতে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে ফিল্ডিং ও টিম কম্বিনেশন উন্নত হলে দুবাই ক্যাপিটালস পরবর্তী ম্যাচগুলোতে আরও প্রতিযোগিতামূলক পারফরম্যান্স দেখাতে পারবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা রয়েছে।
দলের পরবর্তী ম্যাচে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং শক্তি মোকাবিলায় বোলারদের কৌশলগত প্রস্তুতি এবং ব্যাটিং অর্ডারে স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মোস্তাফিজের প্রথম ম্যাচের সাফল্য দলের মনোবল বাড়ালেও সামগ্রিক পারফরম্যান্স উন্নত করতে দলের আরো সমন্বয় প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।


