নিজস্ব প্রতিবেদক
টানা ছয় দিনের অচলাবস্থার পর মঙ্গলবার থেকে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তিন দফা দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন, বদলি আদেশ ও ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনায় শিক্ষক সংগঠনগুলোর সিদ্ধান্তে পরীক্ষাগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে।
শিক্ষক সংগঠনগুলোর যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্ন না ঘটাতে তালাবদ্ধ কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর আগে এবং পরীক্ষা চলাকালীন কোনো বিদ্যালয়ে শাটডাউন কর্মসূচি কার্যকর করা হবে না। ফলে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। সহকারী শিক্ষকরা ১০ম গ্রেডে বেতনভুক্তিসহ তিন দফা দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করে আসছেন। শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষকরা ইতোমধ্যে ১০ম গ্রেডভুক্ত হলেও সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে ১৩তম গ্রেডে অবস্থান করছেন, যা তারা বৈষম্য হিসেবে উল্লেখ করছেন। এছাড়া উচ্চতর গ্রেড–সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং পদোন্নতি কাঠামো সংস্কারের দাবিও আন্দোলনের অন্যতম বিষয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি আন্দোলনরত ৪২ জন সহকারী শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় বদলির আদেশ দেয়। বদলির তালিকায় সংগঠনের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন, যাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে দূরবর্তী জেলায় পদায়ন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের মতে, এ সিদ্ধান্ত তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেললেও আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়নি। তবে পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কঠোর কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। সরকারের শিক্ষানীতি অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য সময়মতো মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন-অগ্রগতি মূল্যায়ন, নতুন শ্রেণিতে উত্তরণের যোগ্যতা নির্ধারণ এবং পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
এর আগে গত নভেম্বর মাসে সহকারী শিক্ষকরা কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি পালন করেন, যার ফলে বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এবং একাধিক শিক্ষক আহত হন। পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর আশ্বাসের ভিত্তিতে সাময়িকভাবে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। তবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় পুনরায় কর্মবিরতি শুরু হয়, যার প্রভাব পড়ে বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমে।
প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও চলমান আন্দোলন ও অচলাবস্থার কারণে তা পিছিয়ে যায়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরীক্ষাগুলো নির্ধারিত সময়সূচিতে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শেষ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, পরীক্ষা চলাকালীন সময় শেষ হওয়ার পর সহকারী শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আপাতত পরীক্ষার সুষ্ঠু আয়োজন ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতি এড়ানোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।


