বিনোদন ডেস্ক
ঢাকার একটি আদালত জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৩ জানুয়ারি নতুন দিন নির্ধারণ করেছে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে না পারায় আদালত পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
মামলাটির সূত্রে জানা যায়, এর আগে গত ২১ অক্টোবর রমনা থানায় সালমান শাহের মামা মোহাম্মদ আলমগীর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি সালমান শাহের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে মোট ১১ জনকে আসামি করেন। আসামিদের মধ্যে সালমান শাহের স্ত্রী সামীরা হক এবং শিল্পপতি ও সাবেক চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ আরও কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদেরও আসামি হিসেবে দেখানো হয়। অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় হত্যা ও সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা পরিকল্পিত হত্যার ইঙ্গিত বহন করে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের একটি বাসা থেকে অস্বাভাবিক অবস্থায় অভিনেতা সালমান শাহকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর পরপরই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয় এবং পরিবারের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই মৃত্যুকে স্বাভাবিক নয় বলে দাবি করা হয়। পরিবারের অভিযোগ ছিল, ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হত্যা হতে পারে এবং এটি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।
সালমান শাহের মৃত্যুর পর সেই বছরেরই ২৪ জুলাই তার বাবা কমর উদ্দীন আহমদ চৌধুরী আদালতে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এতে তিনি অপমৃত্যুর মামলা পুনঃতদন্তের আবেদন জানান এবং মৃত্যুর ঘটনাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করার দাবি তোলেন। পরবর্তীতে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত বাদীপক্ষের রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনার ফলে মামলার তদন্ত পুনরায় শুরু হয় এবং বিভিন্ন পক্ষ থেকে নতুন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সালমান শাহকে হত্যা করেছেন। অভিযোগ অনুযায়ী ঘটনাটি আকস্মিক বা আত্মহত্যা ছিল না, বরং এটি ছিল সুপরিকল্পিতভাবে সংগঠিত একটি অপরাধ। যদিও মামলার কোনো আসামি তদন্ত চলাকালে মারা গেলে আদালত প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে দায় অকার্যকর ঘোষণা করতে পারে, যা প্রচলিত আইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য।
মামলাটির তদন্ত দীর্ঘদিন ধরে চলমান। বিগত সময়ে তদন্ত কার্যক্রমে কয়েক দফা প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও প্রতিবারই তদন্ত অসম্পূর্ণ থাকায় প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়ে গেছে। তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলাটি দীর্ঘ সময় পূর্বের হওয়ায় তথ্য-উপাত্ত যাচাই, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পুনঃজিজ্ঞাসাবাদ, সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন ধাপ সম্পন্ন করতে সময় লাগছে। বিশেষ করে ঘটনাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বক্তব্য ও সম্ভাব্য প্রমাণের পুনর্মূল্যায়ন তদন্তের অগ্রগতিকে প্রভাবিত করছে।
সালমান শাহ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে নব্বই দশকে এক অনন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার আকস্মিক মৃত্যু সে সময় চলচ্চিত্র অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তোলে এবং ভক্তদের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি করে। মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই একাধিক মহলে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ, সন্দেহ ও ব্যাখ্যা উঠে আসে। দীর্ঘ সময় পর পুনরায় হত্যা মামলা হিসেবে তদন্ত শুরু হওয়ায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্নটি আবার সামনে আসে।
বর্তমানে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে নতুন করে ১৩ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণের ফলে মামলার অগ্রগতি নিয়ে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আদালত পরবর্তী তারিখে তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রত্যাশা করছে, যাতে মামলার পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা যায়। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত এবং তথ্যপ্রমাণ যাচাই শেষে আদালত প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
মামলার প্রতিবেদন দাখিলের পর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ, সাক্ষ্যগ্রহণ বা অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এ কারণে তদন্তের অগ্রগতি মামলার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পরিবারের দাবি এবং অভিযোগের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তদন্তের স্বচ্ছতা ও যথার্থতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


