জেলা প্রতিনিধি
গৌরনদী ও মুলাদী উপজেলার মধ্যে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর নির্মিত একটি সেতুর নাম নির্ধারণ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জেরে বরিশালের মুলাদীতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের কাজিরচরে আয়োজিত উদ্বোধনী প্যান্ডেলে এ ঘটনা ঘটে, ফলে নির্ধারিত অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হন আয়োজকেরা।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নির্মিত ৬১৯ মিটার দীর্ঘ সেতুটির উদ্বোধন উপলক্ষে একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার অনলাইনে যুক্ত হয়ে সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করার কথা ছিল। তবে অনলাইনে যুক্ত হওয়ার আগেই উত্তেজিত জনতা প্যান্ডেলে হামলা চালালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনুষ্ঠানস্থলে ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে আয়োজকেরা মঞ্চ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যান। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় উদ্বোধনী কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত না হলেও প্যান্ডেলের চেয়ার, ব্যানার ও অস্থায়ী কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঘটনার মূল কারণ হিসেবে সেতুর নাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনগণের মধ্যে দীর্ঘদিনের ক্ষোভকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের দাবি, শুরুতে সেতুটির নাম ‘সৌহার্দ্য সেতু’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ ছাড়াই নাম পরিবর্তন করে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ নির্ধারণ করা হয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত হামলার ঘটনায় রূপ নেয়।
এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করেন, সেতু নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এমদাদুল হক মজনুকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। স্থানীয় পর্যায়ে তার অবদান স্বীকৃতির দাবি থাকলেও দাওয়াত না পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আরও তীব্র হয়।
মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. গোলাম সরওয়ার জানান, সেতুটির নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পর্যায় থেকে নেওয়া হয়েছিল এবং সে অনুযায়ী উদ্বোধনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। তবে নাম পরিবর্তন নিয়ে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে আগেই আপত্তি ও লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছিল, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।
মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, হামলা ও বিশৃঙ্খলার কারণে নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি চালু হলে গৌরনদী ও মুলাদী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে এবং কৃষিপণ্য পরিবহন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে সময় ও ব্যয় হ্রাস পাবে। তবে নামকরণ সংক্রান্ত বিরোধের কারণে উদ্বোধন বিলম্বিত হওয়ায় এ অঞ্চলের যোগাযোগ সুবিধা কার্যকরভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সেতুর নামকরণ বিষয়ে স্থানীয় মতামত গ্রহণ এবং একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে।


