খেলাধুলা ডেস্ক
ভারতের নারী ক্রিকেট দলের তারকা ব্যাটার স্মৃতি মান্ধানা ও বলিউড সুরকার পলাশ মুচ্ছলের বিবাহবিচ্ছেদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। কয়েক মাস ধরে দাম্পত্যে অস্থিরতার গুঞ্জন চললেও মঙ্গলবার দুজনই পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে সম্পর্কের সমাপ্তির কথা জানান। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে গুজব ও ভ্রান্ত তথ্য প্রচারের অভিযোগ তুলে নেন আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা বিবৃতিতে পলাশ মুচ্ছল লেখেন যে তিনি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে এগিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন করে মিথ্যা গল্প ছড়ানো তাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। সম্পর্কের ভাঙন সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত মন্তব্য না করলেও জানান, এই পরিস্থিতি তার জন্য অত্যন্ত কঠিন সময়। অপরদিকে স্মৃতি মান্ধানা একটি ছোট্ট বিবৃতির মাধ্যমে শুধু সম্পর্কের সমাপ্তির কথা নিশ্চিত করেন; তবে বিচ্ছেদের কারণ বা পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
ঘটনার পটভূমি থেকে জানা যায়, গত ২৩ নভেম্বর স্মৃতি মান্ধানা ও পলাশ মুচ্ছলের বিয়ের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়, এবং অনুষ্ঠান ঘিরে দুই পরিবারেই ছিল ব্যস্ততা। তবে বিয়ের দিন সকালে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন স্মৃতির বাবা শ্রীনিবাস মান্ধানা। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে বিয়ের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়। এই পরিস্থিতির কিছুদিন পরেই পলাশ মুচ্ছলও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, যার ফলে পরিবারগুলোর মধ্যে যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়ে এবং বিয়ের আয়োজন অনিশ্চিত হয়ে যায়।
বিয়ের তারিখ স্থগিত হওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সংবাদ ও গুজব ছড়াতে থাকে। কেউ কেউ ব্যক্তিগত মতামত ও অনুমানভিত্তিক তথ্য প্রচার করতে থাকেন, যা নিয়ে পলাশ তার বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়ে ভ্রান্ত তথ্য প্রচার শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই নয়, পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপরও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তার পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সম্পর্ক ভাঙনের কারণ হিসেবে স্মৃতি বা পলাশ কেউই নির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেননি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, বিয়ের প্রস্তুতির মাঝামাঝি সময়ে পরিবারে আকস্মিক অসুস্থতা, মিডিয়া জল্পনা এবং ব্যক্তিগত চাপ—সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। উচ্চপ্রোফাইল দুজন ব্যক্তিত্ব হওয়ায় তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এর ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হয়।
স্মৃতি মান্ধানা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের নারী ক্রিকেটের অন্যতম প্রধান মুখ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি ব্যাট হাতে ধারাবাহিক সাফল্য এনে দিয়েছেন এবং দলকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যদিকে পলাশ মুচ্ছল বলিউডে সুরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নাম; চলচ্চিত্র, অ্যালবাম এবং স্বতন্ত্র সংগীতচর্চার মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। দুই ভিন্ন ক্ষেত্রের সফল এই দুই ব্যক্তিত্বের সম্পর্ক ঘিরে শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তাই বিচ্ছেদের খবরটিও ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
ব্যক্তিগত সম্পর্কের সমাপ্তি ঘোষণা করার পর দুজনই ভবিষ্যতে নিজেদের পেশাগত দায়িত্বে মনোনিবেশের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ক্রিকেট জগতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্মৃতি মান্ধানা; সামনে তার একাধিক আন্তর্জাতিক সিরিজ রয়েছে। অন্যদিকে পলাশও নতুন সংগীত প্রকল্প ও চলমান চলচ্চিত্রে সুরারোপের কাজে যুক্ত। তাদের বিবৃতি অনুযায়ী, তারা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে পেশাগত জীবনে এগিয়ে যেতে চান।
সম্পর্ক ভাঙন যে তাদের পরিবারগুলোর কাছেও অপ্রত্যাশিত ছিল, তা বিভিন্ন নিকটস্থ সূত্রে জানা যায়। বিয়ের প্রস্তুতি চলাকালীন দুই পরিবারই বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছিল। তাই বিয়ের দিন সকালে স্মৃতির বাবার আকস্মিক অসুস্থতা পুরো আয়োজনকেই অস্থিতিশীল করে। পরবর্তী সময় পরিবারের সদস্যদের শারীরিক অবস্থা, উদ্বেগ এবং চাপের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির আরও পরিবর্তন ঘটে।
এ ঘটনায় ভুয়া সংবাদ ও গুজব ছড়ানোর প্রবণতা যে সংশ্লিষ্টদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তা দুই পক্ষের বিবৃতিতেই স্পষ্ট। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত মন্তব্যের ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপ মোকাবিলা করাও তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তারা শিষ্টাচার ও গোপনীয়তা বজায় রেখে এই সিদ্ধান্তটি প্রকাশ করার পথ বেছে নেন।
বর্তমানে এই দম্পতির বিচ্ছেদের ঘোষণা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, দুজনই অনুরোধ করেছেন—ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সম্মান জানিয়ে ভিত্তিহীন আলোচনা থেকে বিরত থাকার জন্য। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হলে তারা প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে পারেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
স্মৃতি মান্ধানা ও পলাশ মুচ্ছলের বিয়ের প্রস্তুতি থেকে বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত বদলে গেছে। তবে দুজনই নিজেদের জীবনের নতুন অধ্যায়ে পেশাগত দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন।


