আইন আদালত ডেস্ক
শীতের সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চত্বরে বাড়তি নিরাপত্তার মধ্যে সাবেক মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীসহ ষোলো জন আসামিকে বিভিন্ন কারাগার থেকে আনা হয়। সোমবার নির্ধারিত এই হাজিরার দিনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর অগ্রগতি নিয়ে শুনানি করার কথা রয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারিক প্যানেলের।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে আসামিদের প্রিজনভ্যানে আনা হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো ট্রাইব্যুনাল এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের ক্ষেত্রে মামলা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাংবাদিক ও কর্মচারীদেরও তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল।
আসামিদের হাজিরার মধ্যে রয়েছেন—সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম, সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তবে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সাবেক এমপি ফারুক খানকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, এই আসামিদের মধ্যে সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু এবং জুনায়েদ আহম্মেদ পলকের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। ইনুর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান রয়েছে। এছাড়া জুলাই মাসের অভ্যুত্থান–পরবর্তী প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা এবং গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও জুনায়েদ আহম্মেদ পলকের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছে। একইসঙ্গে জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ী, আনিসুল হক এবং সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগে কারফিউ জারি করে ছাত্র–জনতার ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ড সংঘটনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব অভিযোগ আদালত আমলে নিয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। মামলাগুলোর প্রক্রিয়া অগ্রসর হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পক্ষেরা এখন সাক্ষ্যগ্রহণ, চার্জগঠন ও পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ যুবলীগের সভাপতিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তাদের বিরুদ্ধেও শিগগিরই ফরমাল চার্জ দাখিল করা হবে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। এর আগে ১৫ অক্টোবর পৃথক এক মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের সময়সীমা শেষ হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে সময় প্রার্থনার পর তদন্তে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়; কিন্তু পরে প্রতিবেদন জমা না হওয়ায় আবারও সময় বাড়ানো হয়।
ট্রাইব্যুনালের সামনে সকালের সময় থেকেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্য ও আদালতের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন। ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে ভেতরের করিডর পর্যন্ত প্রত্যেককে তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। মামলাগুলোর গুরুত্ব এবং সংশ্লিষ্ট আসামিদের সামাজিক–রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় আদালত এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের হাজিরা ও শুনানি আদালতের চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হলেও, মামলাগুলোর জটিলতা এবং আসামিদের সংখ্যা বিবেচনায় শিগগিরই ধারাবাহিক চার্জ এবং সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে বিচারের গতিপ্রকৃতি আরও স্পষ্ট হবে বলে সংশ্লিষ্ট পক্ষের অভিমত। প্রসিকিউশন জানায়, চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথক মামলায় মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কয়েকবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। ২০ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ১৯ জনকে হাজির করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে তদন্ত অগ্রগতি অনুযায়ী আরও কয়েক দফা হাজিরা অনুষ্ঠিত হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলাগুলোর বিস্তৃতি এবং পৃথক চার্জের কারণে বিচারের বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন আসামির বিরুদ্ধে শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ ও প্রমাণ উপস্থাপনা চলমান রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এসব প্রক্রিয়া আরও গতি পাবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল আশা করছে।


