জাতীয় ডেস্ক
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিতভাবে অবৈধ অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটে এবং প্রতিদিন আনুমানিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। সোমবার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে গত এক বছরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম, অর্জন ও অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। এ সময় সাংবাদিকরা চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায় বিষয়ে প্রশ্ন করেন। উত্তরে উপদেষ্টা জানান, যারা এ বিষয়ে রায় পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন মনে করছেন, তারা আইনি পথ অনুসরণ করে নতুন বেঞ্চে যাওয়া বা প্রধান বিচারপতির শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
তিনি বলেন, রায় নিয়ে ব্যক্তিগত মন্তব্য করার সুযোগ নেই, তবে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বন্দরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে এবং বাংলাদেশের বন্দর উন্নয়নে বিনিয়োগের গুরুত্ব সময়ের সঙ্গে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান, পানগাঁও বন্দরে প্রতিবছর সরকার প্রায় ২২ কোটি টাকা লোকসান গুনছে; সেখানে উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে—এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, বন্দরের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের সমস্যা। তার ব্যাখ্যায় তিনি উল্লেখ করেন, মালবাহী ট্রাক বা কনটেইনারবাহী যানবাহন বন্দরের অভ্যন্তরে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ বা বের হওয়ার সময় অবৈধ অর্থ দাবি করা হয়ে থাকে। তার দাবি, এসব কার্যক্রমে প্রতিদিনই বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতবদল হয় এবং এসব অনিয়ম চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, অতীতে বন্দরের ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রম নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপের ফলে পণ্য খালাস ও ডেলিভারি সময় কমেছে। আগে যেখানে কয়েক দিন লাগত, এখন তুলনামূলক দ্রুত কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার নিয়মিত আলোচনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি জানান, অনেক ব্যবসায়ীই সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এবং কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হওয়ায় তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম উপকৃত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধ অর্থ আদায় পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব কি না—এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা জানান, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণভাবে এ ধরনের কার্যক্রম নির্মূল করা কঠিন। তবে বিভিন্ন পর্যায়ে নজরদারি ও প্রশাসনিক উদ্যোগের ফলে অবৈধ আদায়ের মাত্রা কমেছে বলে তিনি দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে অবৈধ কার্যক্রম আরও কমে আসবে।
এ সময় উপদেষ্টা অতীতের কিছু অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বন্দরের ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, পণ্য খালাসের গতি এবং সেবা উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন। তিনি জানান, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম গতিশীল করতে আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা অপরিহার্য।
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির বৈধতা নিয়ে দায়ের করা রিট আবেদনে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়ও সংবাদ সম্মেলনে আলোচনায় আসে। গত ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ বিষয়ে বিভক্ত রায় দেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষণা করেন, অন্য বিচারপতি রিট আবেদন খারিজ করে ভিন্নমত প্রদান করেন। রায় বিভক্ত হওয়ায় বিষয়টি এখন পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা জানান, বন্দরে সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং অবৈধ অর্থ লেনদেন রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশের প্রধান বন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো হলে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে বন্দর-সম্পর্কিত জটিলতা, মামলা এবং ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতা দূর করার মধ্য দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আরও গতিশীল করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


