চ্যাটজিপিটিতে প্রচারণামূলক বার্তা প্রদর্শন নিয়ে বিতর্ক

চ্যাটজিপিটিতে প্রচারণামূলক বার্তা প্রদর্শন নিয়ে বিতর্ক

 

প্রযুক্তি ডেস্ক

চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের সময় কিছু পেইড ব্যবহারকারীর স্ক্রিনশটে প্রচারণামূলক বার্তার মতো কয়েকটি উপাদান দেখা যাওয়ায় প্ল্যাটফর্মটিতে বিজ্ঞাপন চালু হয়েছে কি না—এ নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যবহারকারীদের একটি অংশ ধারণা করেন যে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের বার্তা চ্যাটজিপিটির ইন্টারফেসে দেখানো হয়েছে।

ওপেনএআই প্রথমদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, প্ল্যাটফর্মটিতে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন চালু নেই এবং বিজ্ঞাপন পরীক্ষাও করা হয়নি। তবে আলোচনার চাপ বাড়তে থাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা মার্ক চেন পরে বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা দেন। তিনি স্বীকার করেন যে চ্যাটজিপিটিতে অ্যাপ-ভিত্তিক কিছু সুপারিশ দেখা গেলেও সেগুলো বিজ্ঞাপন ছিল না; বরং প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব অ্যাপ ইকোসিস্টেমের অংশ ছিল। চেন বলেন, ব্যবহারকারীদের কাছে এই উপস্থাপনা বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে এবং সেই কারণে এ ধরনের সুপারিশ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

মার্ক চেন আরও উল্লেখ করেন, যেকোনো সুপারিশকে স্বচ্ছ ও ব্যবহারবান্ধবভাবে উপস্থাপন করা জরুরি। তিনি বলেন যে সুপারিশগুলো বিজ্ঞাপনের মতো মনে হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। চেন জানান, মডেলের সুপারিশ-সংক্রান্ত নির্ভুলতা এবং উপস্থাপনার মান উন্নত না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সাজেশন বন্ধ থাকবে। ভবিষ্যতে ব্যবহারকারীরা চাইলে এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা সেটিংসও পেতে পারেন।

চ্যাটজিপিটির প্রধান নিক টার্লিও একই ধরনের ব্যাখ্যা দেন। তিনি জানান, চ্যাটজিপিটিতে বর্তমানে কোনো বিজ্ঞাপন নেই এবং যেসব ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে, সেগুলো প্রকৃত বিজ্ঞাপন নয়। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যদি প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞাপন চালুর পথে এগোয়, তবে তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এবং ব্যবহারকারীর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই করা হবে।

এ ঘটনা ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক ব্যবহারকারীদের আস্থা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত বৃহত্তর আলোচনাকে সামনে নিয়ে এসেছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন সংযোজনের প্রশ্নটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ব্যবহারকারীরা সাধারণত এ ধরনের টুল থেকে নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দেন। ফলে যেকোনো ধরনের বাণিজ্যিক উপাদান, তা সুপারিশ বা বিজ্ঞাপন যাই হোক না কেন, ব্যবহারকারীদের ধারণায় প্রভাব ফেলতে পারে।

ওপেনএআই–এর ভেতরে নীতিগত কিছু পরিবর্তন ও অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণের বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির গুণগত মান উন্নয়নের অভ্যন্তরীণ প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে বলে জানা যায়। কোম্পানির নেতৃত্ব মনে করছে যে চ্যাটজিপিটির সক্ষমতা, নির্ভুলতা ও ব্যবহারকারীর সন্তুষ্টি নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বাণিজ্যিক উদ্যোগ বা বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য পরিকল্পনা আপাতত দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ বছরের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ নির্বাহী সংযোজন এবং ব্যবসায়িক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার পরিকল্পনা থাকলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠানটির কৌশলে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলের গুণগত মান নিশ্চিত করতে বিপুল পরিমাণ ডেটা, গবেষণা এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। তাই বিজ্ঞাপন বা বাণিজ্যিক আয় বৃদ্ধির চেয়ে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা অর্জনই এখন মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

চ্যাটজিপিটিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত এ বিতর্ক ব্যবহারকারী–প্রযুক্তি সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা সামনে এনেছে—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর মানুষের আস্থা গড়ে ওঠে ধীরে, কিন্তু তা নষ্ট হতে পারে অল্প সময়েই। বিশেষ করে যখন প্ল্যাটফর্মটি বিশ্বব্যাপী লাখো মানুষের ব্যক্তিগত ও পেশাদার কাজে ব্যবহৃত হয়, তখন যেকোনো বিভ্রান্তিকর উপস্থাপনা বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।

ওপেনএআই জানিয়েছে, ভবিষ্যতে প্ল্যাটফর্মে সুপারিশ বা সম্ভাব্য বাণিজ্যিক উপাদান যুক্ত করা হলে তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হবে। ব্যবহারকারীদের সামনে উপাদানের প্রকৃতি কী—তা স্বচ্ছভাবে জানানো হবে। এছাড়া সুপারিশগুলো যেন মডেলের মূল কার্যকারিতা বা ব্যবহারকারীর সিদ্ধান্তে অযাচিত প্রভাব না ফেলে, সেদিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হবে।

বিতর্ক আপাতত প্রশমিত হলেও ব্যবহারকারীদের দৃষ্টি এখন চ্যাটজিপিটির মানোন্নয়ন প্রক্রিয়ার দিকে। প্ল্যাটফর্মটি কতটা নির্ভুল, বিশ্বাসযোগ্য এবং নিরপেক্ষ সেবা দিতে পারে—আগামী সময়ের অভিজ্ঞতা তা স্পষ্ট করবে।

তথ্য প্রুযুক্তি শীর্ষ সংবাদ