জাতীয় ডেস্ক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনী পরিবেশে সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়ে গেছে এবং সহিংসতার আশঙ্কা কমাতে অবৈধ অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার প্রয়োজন।
আজ সোমবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বিভিন্ন নির্বাচনী প্রস্তুতি, প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কিত বেশ কিছু দাবি ও উদ্বেগ কমিশনের কাছে তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, দলটির প্রতিনিধিদল তফসিল ঘোষণার বিষয়ে ইসির অবস্থান, ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়োগ এবং নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে।
তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি এবং কমিশনের পরিকল্পনা বিষয়ে জামায়াতের আগ্রহ ছিল। বিশেষ করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা কীভাবে নিয়োগ পাবেন এবং সেই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে কি না—এ বিষয়টি দলটির আলোচ্যসূচিতে ছিল। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার ঝুঁকি বিবেচনায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদও দেন তিনি।
প্রবাসীদের ভোট প্রদান পদ্ধতি নিয়েও দলটি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। জামায়াতের দাবি, বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বর্তমানে জটিল হওয়ায় তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া সহজীকরণের প্রয়োজনীয়তা বৈঠকে তুলে ধরেন প্রতিনিধি দল।
নির্বাচনে স্বচ্ছতা রক্ষায় সিসিটিভি ব্যবহারের গুরুত্বও বৈঠকে উল্লেখ করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি জানান, ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপনের দাবি তারা জোরালোভাবে উপস্থাপন করেছেন। কমিশনের পক্ষ থেকে ব্যয়সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতার কথা জানানো হলেও জামায়াতের মতে, নির্বাচনী কার্যক্রমকে বিশ্বাসযোগ্য রাখতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার অপরিহার্য।
বৈঠকে নির্বাচনী প্রচারণার পরিবেশ নিয়েও আলোচনা হয়। জামায়াতের দাবি, তাদের কয়েকজন নেতা ও কর্মী প্রচারণায় গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, বৈঠকে তারা জানতে চেয়েছেন, তফসিল ঘোষণার পর এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ইসি কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
এ সময় তিনি বলেন, ইসি জানিয়েছে যে কমিশন তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমার মধ্যে থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে। জামায়াত প্রতিনিধি দল কমিশনের এই অবস্থানকে স্বাগত জানালেও নির্বাচনী প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক আরও সুদৃঢ় করার পরামর্শ দিয়েছে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, সব দলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি বলে তাদের পর্যবেক্ষণ। তিনি উল্লেখ করেন, কোনো নির্বাচনী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অনিয়ম করলে তা দ্রুত শনাক্ত করে কমিশনের কাছে জানানো হবে এবং ইসির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
ভোট নিয়ে উদ্বেগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, দলটি আশা করছে নির্বাচন কমিশন দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা—এসব বিষয় নিশ্চিত হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও বিশ্বাসযোগ্য হবে।
জামায়াতের এসব দাবি ও পর্যবেক্ষণ বর্তমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ভোটারদের অংশগ্রহণ সম্পর্কিত চলমান আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতিটি দলই তাদের উদ্বেগ, পরামর্শ এবং প্রত্যাশা তুলে ধরছে।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে তারা প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ এই প্রস্তুতিরই অংশ।
মিয়া গোলাম পরওয়ারের বক্তব্য অনুযায়ী, জামায়াত আশা করছে কমিশন তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করবে, যাতে ভোটার, প্রার্থী ও নির্বাচনী কর্মকর্তা—সকলের আস্থা অর্জিত হয় এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাও পায়।


