ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল প্রস্তুতি নিয়ে সিইসির সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল প্রস্তুতি নিয়ে সিইসির সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক

জাতীয় ডেস্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সম্ভাব্য গণভোটের তফসিল প্রণয়নকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে জামায়াতে ইসলামের প্রতিনিধি দল। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কমিশনের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের পাশাপাশি অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াত ইসলামের পক্ষ থেকে সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয়। চলমান নির্বাচন প্রস্তুতি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া, প্রচারণা বিধি, ভোট গ্রহণের পরিবেশ এবং সম্ভাব্য গণভোট আয়োজনের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রতিনিধি দলটি কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে।

আগামী জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের সময়সূচি প্রণয়নের কাজ বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। এসব আলোচনার উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও সংঘাতমুক্ত রাখা। এই প্রেক্ষাপটে জামায়াতের প্রতিনিধি দলের বৈঠককে কমিশন গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছে।

নির্বাচন কমিশন দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ও পরামর্শ অব্যাহত রেখেছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। চলতি প্রক্রিয়ায় কমিশন একদিকে নির্বাচনের সময়সূচি চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যদিকে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সমন্বয় করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ এ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

বৈঠকের আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি, সহায়তা ও সমন্বয় নিয়ে ওই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনকালীন প্রশাসন কীভাবে নিরপেক্ষ এবং সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করবে—তা নিশ্চিত করাও কমিশনের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধন প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। বিদেশি ভোটার সেবা বিস্তৃত করার উদ্যোগ কমিশন নতুন করে গ্রহণ করেছে, যাতে প্রবাসীরা সহজে নিবন্ধন ও তথ্য হালনাগাদ করতে পারেন। এসব পদক্ষেপ নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার প্রচেষ্টার অংশ।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক নির্বাচনের জন্য একটি আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করে বলে কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করেন। দলগুলোর সুপারিশ, উদ্বেগ ও প্রস্তাবনা কমিশন বিবেচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত করতে পারে। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, প্রার্থীদের আচরণবিধি, নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলোতে দলগুলোর মতামত কমিশনের প্রণীত নীতিমালাকে আরও কার্যকর করতে ভূমিকা রাখে।

আসন্ন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে একাধিক দফা বৈঠক করেছে এবং নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকেও শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন ও গণভোট একই সময়ে আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে কমিশনের অভ্যন্তরীণ আলোচনা রয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ও প্রশাসনিক সক্ষমতা যাচাই করে কমিশন এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কমিশন আহ্বান জানাচ্ছে যাতে তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং ভোটারদের উৎসাহিত করে গণতান্ত্রিক কর্মকাঠামোকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখে।

জামায়াত ইসলামের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি এ ধারাবাহিক পরামর্শ প্রক্রিয়ারই অংশ। আলোচনার ভিত্তিতে কমিশন আসন্ন তফসিল ঘোষণার আগে বিভিন্ন দিক পুনর্মূল্যায়ন করবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচন ও গণভোটের সার্বিক প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও কয়েকটি বৈঠক করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ