ধুরন্ধরের বক্স অফিস অগ্রযাত্রা: তিন দিনে ১০০ কোটির মাইলফলক

ধুরন্ধরের বক্স অফিস অগ্রযাত্রা: তিন দিনে ১০০ কোটির মাইলফলক

 

বিনোদন ডেস্ক

মুক্তির পর প্রথম তিন দিনেই ১০০ কোটির ঘর অতিক্রম করেছে রণবীর সিং অভিনীত বলিউড সিনেমা ‘ধুরন্ধর’। ৫ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া এই অ্যাকশন থ্রিলার ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে দর্শকদের উল্লেখযোগ্য সাড়া পাচ্ছে। মুক্তির শুরুর দিকে অগ্রিম বুকিং নিয়ে সংশয় থাকলেও প্রদর্শনের পর থেকে প্রতিদিনই আয় বেড়েছে, যা এ বছরের বলিউড বাজারে নতুন উদ্দীপনা যোগ করেছে।

মুক্তির প্রথম সপ্তাহান্তেই সিনেমাটি যে প্রবল বাণিজ্যিক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দৈনিক আয়-তথ্যে। আয় বিশ্লেষণকারী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মুক্তির তৃতীয় দিন রবিবার ‘ধুরন্ধর’ আয় করেছে প্রায় ৪৩ কোটি রুপি, যা যুক্ত হয়ে ভারতে মোট আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৩ কোটি রুপিতে। প্রথম দিন শুক্রবার ব্যবসা করে ২৮ কোটি রুপি, আর দ্বিতীয় দিন শনিবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ কোটি রুপিতে। প্রতিদিনের আয়ের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা চলচ্চিত্রটির প্রতি দর্শকদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করছে।

বক্স অফিসে প্রথম তিন দিনের সাফল্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বড় শহরগুলোর পাশাপাশি তুলনামূলক ছোট ও মফস্বল এলাকাতেও দর্শক উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। সপ্তাহান্তজুড়ে বহু প্রেক্ষাগৃহে অতিরিক্ত শো যোগ করতে হয়েছে চাহিদার কারণে। ভারতের চলচ্চিত্রবাজারে সাধারণত বছর শেষের সময়ে কিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমা মুক্তি পেলেও ‘ধুরন্ধর’-এর প্রবেশ অনেককে আশাবাদী করেছে যে চলতি মাসেই সিনেমাটি আরও নতুন বাণিজ্যিক রেকর্ড স্পর্শ করতে পারে।

চলচ্চিত্রটির বাণিজ্যিক সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন এর ঘরানাভিত্তিক আকর্ষণ, তারকা-প্রভাব, এবং প্রচারণা-পরবর্তী সময়ে দর্শকদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। সিনেমাটিতে রণবীর সিংকে দেখা গেছে একজন সেনা কর্মকর্তার চরিত্রে, যিনি চারজন বিভীষিকাময় সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে চরিত্রটিকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। যদিও শুরুতে চরিত্রটি বাস্তব কোনো ব্যক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি কি না—এ ধরনের প্রশ্ন উঠেছিল, পরবর্তীতে সেন্সর বোর্ড পরিষ্কার জানায় যে এটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এক চরিত্র।

গত কয়েক বছরে বলিউডে একাধিক উচ্চ বাজেটের অ্যাকশন চলচ্চিত্র বড় আকারে ব্যবসা করতে না পারলেও ‘ধুরন্ধর’ তার ব্যতিক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম কয়েক দিনের সাফল্য টেকসই হলে এটি চলতি বছরের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমাগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিতে পারে। পাশাপাশি, ছুটির মৌসুম ও বছরের শেষভাগে পারিবারিক বিনোদনমূলক কনটেন্টের প্রতি দর্শকদের আকর্ষণও সিনেমাটির আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের মতে, মুক্তির প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই এর প্রকৃত বাণিজ্যিক সক্ষমতা স্পষ্ট হবে। সাধারণত ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রথম সপ্তাহান্তের আয় গুরুত্বপূর্ণ হলেও পরবর্তী সপ্তাহের দর্শক উপস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের নির্দেশক হিসেবে বিবেচিত হয়। বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে দ্বিতীয় সপ্তাহেও ‘ধুরন্ধর’ শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

বাণিজ্যিক সাফল্যের পাশাপাশি সিনেমাটির প্রভাব বলিউডের সামগ্রিক বাজারেও ইতিবাচক হতে পারে। গত কয়েক মাস ধরে বক্স অফিসে কিছুটা মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, যেখানে অনেক চলচ্চিত্র প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এমন সময়ে ‘ধুরন্ধর’-এর শক্তিশালী অগ্রগতি প্রেক্ষাগৃহভিত্তিক চলচ্চিত্রের পুনরুত্থানের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি নির্মাতাদের নতুন চলচ্চিত্র প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে পারে এবং একই সঙ্গে আগামী মাসগুলোতে আরও উচ্চ বাজেটের সিনেমা মুক্তির পথ সুগম করতে পারে।

সিনেমাটির সাফল্য রণবীর সিংয়ের ক্যারিয়ারেও নতুন গতি এনে দিতে পারে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র পর্যবেক্ষকরা। অ্যাকশনধর্মী চরিত্রে তার পূর্ববর্তী কাজগুলো দর্শকমহলে প্রশংসা পেলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কাজ বাণিজ্যিকভাবে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। ‘ধুরন্ধর’-এর এ সাফল্য তার অভিনয়জীবনে নতুন অধ্যায় তৈরি করতে পারে এবং প্রযোজকদের কাছে তার বাজারমূল্য আরও শক্তিশালী হতে পারে।

সব মিলিয়ে প্রথম তিন দিনের পরিসংখ্যান বলছে, ‘ধুরন্ধর’ এখন শক্তিশালী বাণিজ্যিক গতিতে এগোচ্ছে। আগামী দিনগুলোর আয়-তথ্যই নির্ধারণ করবে সিনেমাটি দীর্ঘমেয়াদে কতদূর যেতে পারে এবং চলতি বছরের বক্স অফিসে এটি কোন অবস্থান দখল করবে।

বিনোদন শীর্ষ সংবাদ