জাতীয় ডেস্ক
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃত ডিগ্রিধারীদের যোগ্যতার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পূর্বে এই পদে আবেদন করার সুযোগ কেবল আলিম সনদধারী ব্যক্তিদের জন্য সীমিত ছিল। আইন মন্ত্রণালয় সংশোধিত নীতিমালার মাধ্যমে এ যোগ্যতা সম্প্রসারণ করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
গতকাল প্রকাশিত এক আনুষ্ঠানিক বিবরণে উপদেষ্টা জানান, মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় আইনগত পর্যালোচনা ও বিধিবিধান সংশোধন শেষে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃত বোর্ড থেকে দাওরায়ে হাদিস সনদধারী ব্যক্তিদেরও নিকাহ রেজিস্ট্রার পদে আবেদন করার সুযোগ উন্মুক্ত করেছে। সংশোধনী কার্যকর হওয়ার ফলে আজ থেকে এই যোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত একটি বিষয়ে নতুন দিক উন্মোচিত হলো বলে সংশ্লিষ্ট মহলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজির দায়িত্ব মানুষের পারিবারিক ও ধর্মীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিবাহ নিবন্ধনের আইনগত কাঠামো নিশ্চিত করা, প্রয়োজনীয় নথিপত্র সম্পাদন, প্রযোজ্য বিধি-বিধান অনুসরণসহ বেশ কিছু আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করেন কাজিরা। এ কারণে এ পদের নিয়োগে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধর্মীয় জ্ঞান এবং নাগরিক দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা বিবেচনা করে নিয়মনীতি নির্ধারণ করে থাকে সরকার।
এ পর্যন্ত বহু বছর ধরে এ পদে আবেদন করার জন্য আলিম বা সমমানের সনদধারীদের যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস সনদ সরকারিভাবে মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকেই নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ওঠে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। নতুন সংশোধনী সেই দাবির একটি বাস্তবায়ন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর ফলে কওমি সনদধারী একটি বৃহৎ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে সরকারি কাঠামোয় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত নীতিমালায় কোন প্রকার শিক্ষাগত মান, কোর্স সমমান বা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতির বিষয়টি কীভাবে যাচাই করা হবে—এ সম্পর্কিত বিধানও সংযোজন করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃত বোর্ড থেকে প্রদত্ত দাওরায়ে হাদিস সনদকে নির্দিষ্ট মাত্রার ধর্মীয় শিক্ষার প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পাশাপাশি প্রার্থীর অন্যান্য যোগ্যতা, যেমন বয়সসীমা, চরিত্রগত সনদ, প্রশিক্ষণ এবং কর্মস্থলের প্রয়োজন অনুযায়ী ক্ষেত্রবিশেষে নির্ধারিত অন্যান্য শর্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
এ সিদ্ধান্তের ফলে নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রার্থীর পরিধি প্রসারিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নতুন কাজি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান থাকায় এই সংশোধন নিয়োগ কাঠামোতে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে কওমি শিক্ষাপদ্ধতির শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান বেশি রয়েছে, সেখানে আগ্রহী প্রার্থীদের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হতে পারে।
পাশাপাশি প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন যোগ্যতার অন্তর্ভুক্তি ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ, তদারকি এবং কর্মপদ্ধতি উন্নয়নে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। নিকাহ রেজিস্ট্রারদের দায়িত্ব মূলত মুসলিম পারিবারিক আইন সম্পর্কিত বিধানসমূহ সঠিকভাবে প্রয়োগ করা এবং বিবাহ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আইনগত স্বচ্ছতা বজায় রাখা। তাই নতুন যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের এই দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ বা কর্মমুখী নির্দেশনার ব্যবস্থা ভবিষ্যতে গুরুত্ব পেতে পারে।
এদিকে, সংশোধনী কার্যকর হওয়ায় নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগবিধি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান আলোচনার একটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো। ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন সম্পর্কিত যোগ্যতার সমন্বয় সরকারের নীতি পরিমার্জনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই ও নিয়োগ কার্যক্রম প্রচলিত আইন ও বিধিমালার আলোকে পূর্বের মতোই পরিচালিত হবে।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশোধনী কার্যকর হওয়ায় এখন থেকে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃত দাওরায়ে হাদিস সনদধারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রার পদে আবেদন করতে পারবেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুর মাধ্যমে সংশোধনের বাস্তব প্রয়োগ শুরু হলে এর প্রশাসনিক এবং সামাজিক প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


