নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিবের আচরণে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের ক্ষোভ

নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিবের আচরণে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের ক্ষোভ

 

জাতীয় ডেস্ক

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিবের আচরণকে ‘অপ্রত্যাশিত’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে উপজেলা ইলেকশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির দাবি, ন্যায্য দাবিসংক্রান্ত কার্যবিবরণী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নিকট হস্তান্তর করতে গেলে গত ২ ডিসেম্বর জ্যেষ্ঠ সচিব উপস্থিত কর্মকর্তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করেন। এ ঘটনাকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করে অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, এমন আচরণের ফলে অফিসিয়াল কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।

২ ডিসেম্বরের ওই ঘটনার পর ৬ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আশফাকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাধারণ সদস্যরা ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পেশাগত উন্নয়ন, সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, সার্ভিস কমিশন গঠন এবং প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাসসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে মতামত উপস্থাপন করেন। আলোচনার পর সর্বসম্মতভাবে নয়টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এসব সিদ্ধান্তে ইসি–এর অভ্যন্তরীণ মানবসম্পদ উন্নয়ন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক কাঠামোর শক্তিশালীকরণ এবং নির্বাচনী কাজে সমন্বয় জোরদারের প্রস্তাব গুরুত্ব পায়।

সভায় কর্মকর্তারা জানান, মাঠপর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে সার্ভিস কমিশন বাস্তবায়ন, পদোন্নতি, পদ আপগ্রেডেশন এবং কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছেন। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন নিয়মিত কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়বে এবং জাতীয় নির্বাচনের মতো বৃহৎ আয়োজন পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। সিইসি পূর্বে এ বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করায় সভায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম প্রস্তাবটি ছিল নির্বাচন কমিশন সার্ভিস বাস্তবায়নের জন্য দ্রুততম সময়ে বিধিমালা প্রণয়ন এবং তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা। কর্মকর্তারা মনে করেন, সার্ভিস কাঠামো সুনির্দিষ্ট হলে মাঠপর্যায়ের অফিসগুলোর কর্মপরিবেশ ও দায়িত্ববণ্টন পরিষ্কার হবে। এতে নির্বাচনী প্রস্তুতি ও পরিচালনায় সমন্বয় বাড়বে এবং দাপ্তরিক জটিলতা কমবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব ইসি–এর নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে বণ্টনের দাবি জানানো হয়। সংগঠনের মতে, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের দায়িত্ব প্রদান করলে মাঠপর্যায়ে অভিন্ন কাঠামোর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হবে। এতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রতিটি আসনে দুইজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়, যাতে মনিটরিং ও সমন্বয় আরও সুসংহত হয়।

তৃতীয় প্রস্তাবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদকে ষষ্ঠ গ্রেডে এবং সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদকে নবম গ্রেডে উন্নীত করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে পদোন্নতি উপযোগী কর্মকর্তাদের দ্রুত পদোন্নতি প্রদানের কথা বলা হয়। কর্মকর্তাদের মতে, দীর্ঘদিন স্থবির পদোন্নতি কাঠামো মাঠপর্যায়ে কর্মমোটিভেশন কমিয়ে দিয়েছে। পদোন্নতি বাস্তবায়িত হলে মানবসম্পদ ব্যবহারে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়বে।

চতুর্থ প্রস্তাবে উপজেলা নির্বাচন অফিসকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য অতিরিক্ত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, স্ক্যানিং অপারেটর, পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তাকর্মী পদ সৃষ্টির দাবি উত্থাপিত হয়। বর্তমানে এসব অফিসে জনবলের ঘাটতির কারণে নিয়মিত সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। দীর্ঘদিনের চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করলে অভিজ্ঞ জনবল ধরে রাখা এবং কাজের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা সহজ হবে।

সভায় অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ও আঞ্চলিক কমিটি দ্রুত ঘোষণা এবং সহকারী উপজেলা নির্বাচন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ঐক্য পরিষদ গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। কর্মকর্তারা মনে করেন, সংগঠনের কাঠামো শক্তিশালী হলে নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় মাঠপর্যায়ের মতামত প্রতিফলিত হবে।

অন্য একটি সিদ্ধান্তে কর্মকর্তাদের জন্য যানবাহন সরবরাহের দাবি জানানো হয়। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে দ্রুত চলাচলের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার জন্য ডাবল কেবিন পিকআপ এবং সহকারী কর্মকর্তার জন্য নতুন মোটরসাইকেল বরাদ্দের কথা বলা হয়।

এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোটার তালিকা মুদ্রণের দায়িত্ব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তার ওপর ন্যস্ত করার দাবি করা হয়। সভায় বলা হয়, পূর্ববর্তী উপজেলা নির্বাচনে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল, যা মাঠপর্যায়ে কাজের গতিশীলতা বাড়াতে সহায়ক হয়েছিল।

সভায় উপস্থাপিত সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল জ্যেষ্ঠ সচিবের আচরণের নিন্দা। কর্মকর্তারা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন আচরণ মাঠপর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তারা ভবিষ্যতে ঘটনা পুনরাবৃত্তি এড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ