বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে ধর্মীয় বিভাজন প্রসঙ্গ ও রাজনৈতিক কর্মসূচির দিকনির্দেশনা

বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে ধর্মীয় বিভাজন প্রসঙ্গ ও রাজনৈতিক কর্মসূচির দিকনির্দেশনা

 

রাজনীতি ডেস্ক

রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে দেশে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দেশের ভিন্নমত ও বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভক্তি তৈরির একটি প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা জাতীয় ঐক্য ও স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেটে অনুষ্ঠিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনার কর্মসূচি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে আয়োজিত এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল দলীয় নীতিমালা, নতুন কর্মপরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল তুলে ধরা। কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আর সঞ্চালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।

বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখালেও ধর্মের নামে রাষ্ট্র বা সমাজকে বিভাজনের কোনো প্রচেষ্টাই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর মতে, দেশের দীর্ঘদিনের সামাজিক সম্প্রীতি ও বহুত্ববাদকে ক্ষুণ্ন করার যেকোনো প্রচেষ্টা স্বাধীনতার মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব ধর্ম ও মতের মানুষ সমান মর্যাদায়, সহাবস্থানের ভিত্তিতে বসবাস করবে—এটাই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মৌলিক ধারণা ছিল এবং এখনও আছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম একটি বহুমাত্রিক ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া, যেখানে ধর্ম, ভাষা ও জাতীয় পরিচয় নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিয়েছিল। তাঁর ভাষায়, এর মূল লক্ষ্য ছিল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত থাকবে। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন মহল সেই অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রধারাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে যেকোনো প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে সংগঠনকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তাঁর মতে, দলব্যাপী সাংগঠনিক পুনর্গঠন, নেতৃত্বের বিকাশ এবং তরুণ প্রজন্মকে রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত করার বিষয়গুলো এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ছাত্রদলকে ‘অগ্রবর্তী শক্তি’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ভবিষ্যতের আন্দোলন-সংগ্রাম, সংগঠন পরিচালনা ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তরুণদের আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরছেন, সেগুলো বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রয়াস বাড়াতে হবে। এসব পরিকল্পনায় রাজনৈতিক সংস্কার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠনের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা আরও শক্তিশালী হবে এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত কর্মসূচিতে রাজনৈতিক সংগঠন সম্প্রসারণ, স্থানীয় পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি, জনমত গঠন এবং নীতি-প্রচারণা জোরদারের ওপর জোর দেওয়া হয়। এছাড়া, জাতীয় অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে প্রস্তাবিত নীতিগুলো তুলে ধরা হয়। বক্তারা মনে করেন, দেশব্যাপী সংগঠনের ভিত্তি আরও মজবুত করতে হলে যুবসমাজের সম্পৃক্ততা বাড়ানো জরুরি, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দলীয় কাঠামোকে শক্তিশালী করবে।

সমাবেশে নেতারা দাবি করেন, রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়ায় সংগঠনের কাজ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মীদের ধৈর্য, শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। বক্তারা মনে করেন, রাজনৈতিক সংঘাত বা বিভাজন বৃদ্ধি পেলে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি ব্যাহত হবে এবং সামাজিক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ন হতে পারে।

অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে বক্তারা শান্তি, সংহতি এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁদের মতে, দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও রাষ্ট্রীয় ঐক্যের ভিত্তি অটুট রাখা জরুরি। সবশেষে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্রের পথচলা এবং দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

রাজনীতি