বিএনপি নেতার বক্তব্যে ধর্মীয় আবরণে রাজনৈতিক প্রতারণার অভিযোগ

বিএনপি নেতার বক্তব্যে ধর্মীয় আবরণে রাজনৈতিক প্রতারণার অভিযোগ

 

রাজনীতি ডেস্ক

রাজনীতিতে ধর্মীয় আবরণ ব্যবহার করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা চলছে—এমন অভিযোগ তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নীতি ও আদর্শহীন একটি দল ধর্মকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে জনমত বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতা, সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও রাষ্ট্র পরিচালনার সক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, যেসব দল রাজনৈতিক রূপরেখা না দিয়ে আবেগনির্ভর বা ধর্মীয় চর্চাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তারা দীর্ঘমেয়াদে জনবিশ্বাস অর্জন করতে পারে না। তিনি দাবি করেন, জনগণ এমন প্রচেষ্টা সম্পর্কে সচেতন এবং বিভ্রান্তিমূলক রাজনৈতিক বার্তা গ্রহণ করে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সুপরিকল্পিত নীতি প্রয়োজন। প্রস্তুতি ছাড়া ক্ষমতায় এলে ব্যর্থতার ঝুঁকি থাকে। তিনি উল্লেখ করেন, উন্নয়ন, অর্থনীতি, প্রশাসন ও সুশাসন–প্রতিটি ক্ষেত্রে দলকে স্পষ্ট নীতিমালা নিয়ে এগোতে হবে। এ উদ্দেশ্যে বিএনপি তাদের ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ জনসমক্ষে তুলে ধরছে, যাতে নাগরিকেরা দলটির ভবিষ্যৎ ধারণা ও অঙ্গীকার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পায়।

তিনি আরও বলেন, জনগণের কাছে দলীয় পরিকল্পনা সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা জরুরি। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ভোটাররা যে দলকে নির্বাচিত করবে, সেই দলের ভবিষ্যৎ রূপরেখা সম্পর্কে জানা তাদের অধিকার। তাই বিএনপি বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও আলোচনার মাধ্যমে তাদের নীতিগত অবস্থান, করণীয় এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য তুলে ধরছে। এতে দলটির মতে, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সক্ষম হবেন।

রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বিএনপি বিভিন্ন সময় ভূমিকা রেখেছে। তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থেকে শুরু করে পঞ্চম সংশোধনী, ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলন, ১৯৯১ সালে সংসদীয় পদ্ধতি পুনর্বহাল এবং ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু—এসব প্রক্রিয়ায় বিএনপির অবদান রয়েছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, এসব ঐতিহাসিক পদক্ষেপ দেশে গণতান্ত্রিক চর্চাকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছিল।

বক্তব্যে তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক দায়িত্বের পার্থক্য স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাস ব্যক্তিগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হলেও রাষ্ট্র পরিচালনা ও নীতিনির্ধারণে প্রয়োজন সুসংগঠিত পরিকল্পনা, বিশেষজ্ঞ মতামত ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। তাই ধর্মকে রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। জনগণকে বিষয়টি উপলব্ধি করে বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক পরিকল্পনার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।

সভায় উপস্থিত নেতারা বিএনপির বিভিন্ন খাতভিত্তিক পরিকল্পনার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। তারা উল্লেখ করেন, জাতীয় অর্থনীতি, প্রশাসনিক সংস্কার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল সেবা–প্রতিটি ক্ষেত্রে দলটির নীতিমালা প্রণয়নাধীন রয়েছে। এসব পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে পর্যায়ক্রমে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ ছাড়াও শিক্ষাবিদ, প্রাক্তন আমলা, গবেষক এবং বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন। তারা বলেন, ভবিষ্যতের দেশ গড়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা থাকা জরুরি। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও উন্নয়ন ও সুশাসনের প্রশ্নে দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

সভায় রাষ্ট্র পরিচালনার সক্ষমতা, নির্বাচনব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা হয়। বক্তারা মনে করেন, দেশের নাগরিকরা এখন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অঙ্গীকার, নীতি ও বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দেখতে চান। তাই যে দলই জনগণের সমর্থন চাইবে, তাদেরকে সুস্পষ্ট নীতিমালা উপস্থাপন করতে হবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, দায়িত্বশীল রাজনীতি ও পরিকল্পিত দেশ পরিচালনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সুসংহত করা সম্ভব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণ বিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ