মালদ্বীপ–বাংলাদেশ পুলিশ সহযোগিতা জোরদারে হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

মালদ্বীপ–বাংলাদেশ পুলিশ সহযোগিতা জোরদারে হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মালদ্বীপের পুলিশ কমিশনার ইসমাইল নাভিনের সঙ্গে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. নাজমুল ইসলামের সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার মালদ্বীপ পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দুই দেশের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারণ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং পেশাদার সম্পর্ক জোরদারে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে মালদ্বীপ পুলিশ সার্ভিস জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে আসছে। এর অংশ হিসেবে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সমন্বিত কার্যক্রম ও পারস্পরিক সহায়তার পরিসর বাড়ানোর বিষয়ে দুই পক্ষই আগ্রহ প্রকাশ করে। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ বিনিময়, নতুন কর্মপদ্ধতি গ্রহণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক পুলিশিংয়ের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। মালদ্বীপের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা কাঠামো আরও শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ পুলিশের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আলোচনায় উঠে আসে।

বৈঠকে উভয় পক্ষ স্বীকার করে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ, মানব পাচার, সাইবার অপরাধ এবং নৌপথে সংঘটিত অপরাধ দমনে পারস্পরিক সহযোগিতা সময়ের দাবি। এ বিষয়ে দুই দেশের পুলিশ বাহিনী নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে যৌথভাবে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি সীমান্ত ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে উভয় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাও আলোচনায় গুরুত্ব পায়।

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ উভয় দেশেই বিপুল সংখ্যক প্রবাসী কর্মী কাজ করেন। মালদ্বীপে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের পুলিশ বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রাখা জরুরি—এ বিষয়টিও বৈঠকে উচ্চারিত হয়। সুশৃঙ্খল অভিবাসন ব্যবস্থাপনা, নথিপত্র যাচাই, শ্রমিকদের আইনগত সহায়তা এবং প্রবাসীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাসে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এ ছাড়া মালদ্বীপে পর্যটননির্ভর অর্থনীতির নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা। পর্যটন খাতে নিরাপত্তা জোরদার করার আন্তর্জাতিক নানা দৃষ্টান্ত পর্যালোচনা করে যৌথ প্রশিক্ষণ আয়োজন, বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন এবং জরুরি প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা করতে পারার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা বিনিময় করা হয়।

বাংলাদেশ পুলিশ গত কয়েক বছরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, সন্ত্রাস দমন, সাইবার নিরাপত্তা এবং আধুনিক তদন্ত পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বৈঠকে এই অভিজ্ঞতাগুলো মালদ্বীপ পুলিশ সার্ভিসের সঙ্গে শেয়ার করার মাধ্যমে দুই দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটতে পারে বলে মত প্রকাশ করা হয়। মালদ্বীপের পক্ষ থেকে তাদের চলমান আধুনিকায়ন কার্যক্রম, প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রসার এবং জননিরাপত্তা শক্তিশালী করার উদ্যোগও বাংলাদেশ হাইকমিশনকে অবহিত করা হয়।

পুলিশ কমিশনার ইসমাইল নাভিন বলেন, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের পুলিশের মধ্যে বহুবর্ষীয় সহযোগিতা রয়েছে, যা সময়ের সঙ্গে আরও প্রসারিত হয়েছে। তিনি এই অংশীদারিত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। কমিশনার জানান, মালদ্বীপ পুলিশ সার্ভিস পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মান উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও ফলপ্রসূ হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম বৈঠকে দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন এবং মালদ্বীপে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনে সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে উভয় দেশের পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত বৈঠক, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ আয়োজনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

বৈঠক শেষে দুই পক্ষ ভবিষ্যতে সহযোগিতা বাড়াতে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সম্মত হয়। এতে যৌথ প্রশিক্ষণ, তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, অপরাধ দমন কৌশল উন্নয়ন এবং প্রবাসী নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে ধারাবাহিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই উদ্যোগ দুই দেশের পুলিশ বাহিনীর সম্পর্ককে আরও সুসংহত করবে এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ