জাতীয় ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনরত কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না এবং ভোটের প্রচারেও অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের পদে থেকে নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নির্বাচনী আচরণবিধির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ফলে এ ধরনের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনের এই কর্মকর্তা নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা, আচরণবিধি এবং আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হয়েছে। এমনকি তফসিল ঘোষণার আগেই তারা সরকারের পদ ছাড়তে পারেন—এমন ধারণাও উঠেছিল। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।
তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, নির্বাচনী আচরণবিধিতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে যে রাষ্ট্রীয় কোনো পদে থেকে কেউ প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। প্রচারে অংশগ্রহণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য অংশ, ফলে প্রচার করতে না পারলে প্রার্থী হওয়াও সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনার স্পষ্ট করে বলেন, সরকারের কোনো পদে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এজন্যই আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে। তফসিল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসছে, এবং কমিশন এ সম্পর্কিত সব আনুষ্ঠানিকতা এবং প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে নির্ধারণ করেছে। আসন বিন্যাস, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, নির্বাচনী প্রজ্ঞাপন প্রস্তুত, বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়সহ প্রয়োজনীয় প্রায় সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচন পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সহায়ক ব্যবস্থার ব্যাপক প্রস্তুতির কথাও জানান তিনি। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ২০ ধরনের পরিপত্র বা নির্দেশনা জারি করার প্রস্তুতি, যা নির্বাচনকালীন ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তরে প্রযোজ্য হবে। এসব পরিপত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ সেল গঠন এবং মনিটরিং সেল পরিচালনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের নির্দেশনা থাকবে। সংশ্লিষ্ট সব ফরমেট প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনার বিভিন্ন ধাপ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে মাঠ প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। নির্বাচন কমিশনের মতে, এসব প্রস্তুতি নির্বাচনকে সুসংগঠিত ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে সহায়ক হবে।
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, তফসিল ঘোষণার আগে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়। এ দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব কমিশনের ওপর বর্তাবে।
তিনি আরও বলেন, চূড়ান্ত পোস্টাল ব্যালটে নিষিদ্ধ বা স্থগিত কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক থাকবে না। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচন করতে না পারা বা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি না পাওয়া কোনো দল বা প্রার্থীর প্রতীক ব্যালটে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনী স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে বিবেচিত।
নির্বাচন কমিশনের দুই কর্মকর্তার মন্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে যে নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষায় কমিশন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। উপদেষ্টাদের প্রার্থী হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সেই নীতিরই অংশ। একই সঙ্গে কমিশন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে স্বচ্ছতা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি জোরদার করেছে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের অবস্থান ও প্রস্তুতি দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে, এবং সে সময় সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখতে কমিশন প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


