আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সোমবার সন্ধ্যায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় অন্তত দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একাধিক স্থানে পরিচালিত গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলায় আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন ও জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানা গেছে। চলমান সংঘাতের মধ্যে সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলার এই সর্বশেষ ঘটনাগুলো পরিস্থিতির অবনতি আরও বাড়িয়েছে।
মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় গোলাবর্ষণের ফলে এক ফিলিস্তিনি নিহত হন। স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা জানান, হামলার পর দ্রুত আহতদের উদ্ধার করে নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হলেও গুলিবিদ্ধ একজনকে জীবিত রাখা সম্ভব হয়নি। ওই এলাকায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বারবার হামলার ঘটনা ঘটছে, যার ফলে বহু পরিবার নিরাপত্তার চাহিদায় বারবার স্থান পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছে।
একই সময়ে উত্তর গাজার জাবালিয়ার হালাওয়া শিবিরে ড্রোন হামলায় একজন ফিলিস্তিনি নারী নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিবিরটিতে বহু বাস্তুচ্যুত নাগরিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। হামলার সময় তাঁবুতে থাকা নারীটি ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং আরও কয়েকজন আহত হন। জরুরি সেবা কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেন। তবে ধারাবাহিক হামলার কারণে কিছু এলাকায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এ ছাড়া গাজা শহরের বিভিন্ন অংশে বাস্তুচ্যুতদের অস্থায়ী তাঁবু লক্ষ্য করে আরেকটি ড্রোন হামলা চালানো হয়। হামলার ফলে বহু মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশুসহ নারীও রয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের বড় একটি অংশ গত কয়েক মাস ধরে সংঘাতের কারণে নিজেদের বাড়িঘর হারিয়েছেন। ফলে তাঁদের কাছে নিরাপদ আশ্রয় বা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। এ অবস্থায় প্রতিটি হামলা তাদের জীবনের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে।
গাজায় বর্তমানে মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অব্যাহত হামলায় পানি, খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ জরুরি চাহিদার সরবরাহ মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, যুদ্ধক্ষেত্রের ভেতরে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পৌঁছানো দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ায় চিকিৎসা ও উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দুই মাস আগে সংঘটিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও গাজায় হামলা অব্যাহত রয়েছে। ওই চুক্তির আওতায় মানবিক সহায়তা পরিবহনসহ বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হামলার সংখ্যা বাড়ায় যুদ্ধবিরতির বিষয়টি কার্যত নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছে। এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে গাজার মানবিক সংকটের গভীরতা আরও বৃদ্ধি পাবে। অবকাঠামো পুনর্গঠন, খাদ্যসহায়তা, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতকরণ এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক মহল দীর্ঘদিন ধরে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে, তবে কার্যকর সমাধান এখনও দৃশ্যমান নয়।
এদিকে সংঘাত-প্রবণ এলাকাগুলোতে পুনরায় উত্তেজনা বাড়তে থাকায় আরও হতাহতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হলে নিকট ভবিষ্যতে পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। এ অবস্থায় গাজার সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছেন, যাদের জীবিকা, নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার ক্রমেই সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।


