জুলাই কন্যা সম্মেলন ২০২৫ উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন

জুলাই কন্যা সম্মেলন ২০২৫ উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন

জাতীয় ডেস্ক

‘১৬ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২৫’ উপলক্ষে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে ‘জুলাই কন্যা সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সকাল ১০টায় আয়োজিত এই সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক, সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা অংশ নেবেন।

আয়োজকদের মতে, এই সম্মেলনের মাধ্যমে নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে সকল ধরনের সহিংসতা মোকাবিলায় সরকারের চলমান কর্মসূচির অগ্রগতি তুলে ধরা হবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হবে। ‘জুলাই কন্যা’ উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়ন, নিরাপত্তা এবং অধিকার সুরক্ষায় সরকারের নীতি-সহায়তামূলক কার্যক্রমের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। আয়োজকদের প্রত্যাশা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নীতি-পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জাতিসংঘ ঘোষিত ‘১৬ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পালন করা হয়। বাংলাদেশও এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সচেতনতা, প্রতিরোধ এবং নীতি–উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য অনুযায়ী, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো, আইনি সুরক্ষা জোরদার এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সম্মেলনে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত সরকারি কর্মসূচির অগ্রগতি উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সম্প্রসারণ, ডিজিটাল সহায়তা হেল্পলাইনকে আরও কার্যকর করা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের বাস্তবায়ন জোরদার এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাভিত্তিক প্রতিরোধমূলক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন। বিশেষ করে কন্যাশিশুর শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা শক্তিশালীকরণ এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নীতি–নির্ধারকরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রকৃতি, এর আর্থসামাজিক প্রভাব এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে মতবিনিময় করবেন। পাশাপাশি নীতিমালা হালনাগাদ, কর্মসূচির সমন্বয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও সফল কর্মসূচির উদাহরণও আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাতে দেশীয় প্রেক্ষাপটে তা বাস্তবায়নের সুযোগ মূল্যায়ন করা যায়।

সম্মেলনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কন্যাশিশুর অধিকার সুরক্ষায় পরিবারের ভূমিকা, বিদ্যালয়ভিত্তিক নিরাপত্তা পরিবেশ, অনলাইন হয়রানি প্রতিরোধে সক্ষমতা উন্নয়ন এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ। সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা কিশোরী ক্লাব, কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ ও স্থানীয় নারী উন্নয়ন ফোরামগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করবেন। উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতায় পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি এবং মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জও উপস্থাপিত হবে।

এ আয়োজনের মাধ্যমে আগামী বছরের জন্য একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। নারী ও কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ, জরিপভিত্তিক তথ্য ব্যবহার এবং নীতি–স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণকে আগামী বছরের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। একইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর সমন্বিত ভূমিকা নিশ্চিত করার বিষয়ে সুপারিশ করা হবে।

সম্মেলনের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে প্রযুক্তি–নির্ভর সহিংসতা প্রতিরোধ। ডিজিটাল নিরাপত্তা, কিশোরীদের অনলাইন ঝুঁকি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির ধরন ও প্রতিকারব্যবস্থা উন্নয়ন—এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত অভিযোগ গ্রহণ, প্রমাণ সংরক্ষণ এবং তাৎক্ষণিক প্রতিকার ব্যবস্থা জোরদারের প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন।

১০ ডিসেম্বরের এই সম্মেলন দেশের নারী ও কন্যাশিশু সুরক্ষা–সংক্রান্ত নীতি ও কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণে জাতীয় পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মন্ত্রণালয় আশা করছে, সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়িত হলে সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগের কার্যকারিতা বাড়বে এবং নারী ও কন্যাশিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় অগ্রযাত্রা আরও শক্তিশালী হবে।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ