নিজস্ব প্রতিবেদক
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বেগম রোকেয়ার অবদান, নারী শিক্ষায় তার ভূমিকা ও সমাজে নারীর অবস্থান উন্নয়নে তার কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
তারেক রহমান জানান, রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও বেগম রোকেয়া সমাজে নারীর অধিকার ও শিক্ষার প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া তার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করেছিলেন নারীর পিছিয়ে থাকার কারণগুলো এবং শিক্ষার মাধ্যমেই নারীর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তার বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, নারী শিক্ষাকে বিস্তৃত করে ব্যক্তিত্ব বিকাশে বেগম রোকেয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং বিশেষ করে মুসলিম নারীদের শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি প্রথম উদ্যোগ নেন।
তারেক রহমান বলেন, নারীমুক্তি ও শিক্ষাবিস্তারের প্রচেষ্টায় বেগম রোকেয়াকে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সমাজের রক্ষণশীল অংশের বাধা সত্ত্বেও তিনি তার কাজ চালিয়ে যান এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অটল অবস্থান ধরে রাখেন। তার কথায়, বেগম রোকেয়া তার লেখনীর মাধ্যমে সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য, বঞ্চনা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি সংসার, সমাজ ও অর্থনীতিতে নারীর স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদাকে কেন্দ্রীয় গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন এবং এই লক্ষ্য অর্জনে উপযুক্ত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
বার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়, নারী সমাজকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যেই বেগম রোকেয়া সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। শত প্রতিবন্ধকতার পরেও তিনি নারীর অধিকারের পক্ষে কাজ চালিয়ে যান এবং তার কর্মপ্রচেষ্টা নারী সমাজকে নতুন দিশা প্রদান করে। তারেক রহমান বলেন, বেগম রোকেয়ার জীবন ও আদর্শ নারী শিক্ষার বিস্তার, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন দক্ষিণ এশিয়ায় নারী জাগরণের অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্ম ও মৃত্যুদিন একই তারিখে হওয়ায় এ দিনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশে প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ পালিত হয়, যেখানে তার স্মরণে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই দিবসকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে নারী শিক্ষার প্রসার, নারীর অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়।
বেগম রোকেয়া তার সাহিত্যকর্ম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নারীর অবস্থান উন্নয়নে দীর্ঘস্থায়ী ভূমিকা রাখেন। ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ তার উল্লেখযোগ্য অবদানগুলোর একটি, যা পরে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। সমাজে নারীর স্বাধীনতা ও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে তিনি উপন্যাস, গল্প এবং প্রবন্ধ রচনা করেন, যার মধ্যে ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই সাহিত্যকর্মে তিনি নারী নেতৃত্ব ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির কল্পচিত্র তুলে ধরেন, যা পরবর্তীতে নারীমুক্তির আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে বিবেচিত হয়।
তারেক রহমান তার বার্তায় আশা প্রকাশ করেন যে বেগম রোকেয়ার কর্মপ্রবাহ ও অবদান ভবিষ্যতেও নারী সমাজকে অনুপ্রাণিত করবে এবং বাংলাদেশের নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের পথে তার আদর্শ দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, বেগম রোকেয়ার চিন্তা ও কর্ম নারীর স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই উপলক্ষে তার রচিত সাহিত্য, শিক্ষা আন্দোলনে তার ভূমিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার নারী জাগরণে তার অবদান পুনর্বিবেচনা করা হয়। সমাজে নারীর অবস্থান উন্নয়ন, অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষার বিস্তারে তার প্রচেষ্টা এখনো প্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হয়, এবং এ কারণে বেগম রোকেয়া বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হিসেবে বিবেচিত।
সোমবার তারেক রহমানের বক্তব্যের মাধ্যমে বেগম রোকেয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো প্রসঙ্গে আবারও স্মরণ করা হয় যে, তার আদর্শ ও অবদান নারী শিক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আজও দেশের নীতি-পরিকল্পনা ও সামাজিক আলোচনায় প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে।


