সরকারি কর্মচারীদের পে স্কেল কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ

সরকারি কর্মচারীদের পে স্কেল কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন পে স্কেল চূড়ান্তকরণ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেতন কাঠামো নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিলে সরকারি কর্মচারীদের একটি অংশ আন্দোলনে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সভা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারি কর্মচারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা আলটিমেটাম দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, পে স্কেল কার্যক্রম দ্রুত শেষ না হলে জানুয়ারির মধ্যে কর্মচারীরা কর্মসূচিতে যেতে পারেন। এই সম্ভাবনা রাজনৈতিক পরিবেশ ও নির্বাচনকালীন সময় বিবেচনায় সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে—এই বিবেচনায় কোর কমিটি পে স্কেল কার্যক্রম দ্রুত সমাপ্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।

এ আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয় যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে যুক্ত হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনে চলমান বা সম্ভাব্য আন্দোলন যেন সহিংস রূপ না নেয় এবং শিক্ষা কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সরকার গত ২৪ জুলাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের উদ্দেশ্যে একটি পে কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়েছে সাবেক অর্থসচিব এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানকে। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে বেতন কাঠামো সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। কমিশন বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে এবং বিদ্যমান বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করছে।

সরকারি কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী, নতুন পে স্কেলে মূল্যস্ফীতি, বাজারদর, জীবনযাত্রার ব্যয়, পেশাগত ঝুঁকি ও অভ্যন্তরীণ বৈষম্যসহ বিভিন্ন সূচক বিবেচনায় নিয়ে কাঠামো তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। কর্মচারী সংগঠনগুলোর মতে, বেতন কাঠামো দ্রুত হালনাগাদ না হলে চাকরিতে অনুপ্রেরণা কমে যেতে পারে এবং প্রশাসনিক দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সরকার কবে নতুন স্কেল কার্যকর করবে—তা সরকারি কর্মচারী মহলে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নবম জাতীয় পে স্কেলের গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। গত শুক্রবার রাজধানীতে তাদের আয়োজিত মহাসমাবেশে এই আলটিমেটাম ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের নেতারা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গেজেট প্রকাশ না হলে ১৭ ডিসেম্বর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। পরিষদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, গেজেট প্রকাশে বিলম্ব হলে তারা বৃহত্তর কর্মচারী মহলকে সঙ্গে নিয়ে ধাপে ধাপে কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে।

কোর কমিটির সভায় এসব তথ্য উপস্থাপন করার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং পে স্কেল প্রণয়নকারী সংস্থাগুলোকে নির্ধারিত সময়সীমা মেনে কাজ এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সভায় আরও আলোচনা হয় যে, চলমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের পে স্কেল নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হলে তা নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং জনগণের সেবা নিশ্চিত রাখতে পে স্কেল কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে শেষ করাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন সরকারি প্রশাসনের সামগ্রিক দক্ষতা, কর্মপরিবেশ এবং দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বেতন কাঠামো সংশোধন হলে কর্মচারীদের আর্থিক সুরক্ষা কিছুটা বৃদ্ধি পাবে এবং চাকরিতে স্থিতিশীলতা বাড়তে পারে। তবে একই সঙ্গে সরকারের ওপর আর্থিক ব্যয়ও বাড়বে, যা বাজেট বাস্তবায়নে নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তাই নতুন বেতন কাঠামোর ব্যয়ভার সামলাতে কী ধরনের আর্থিক পরিকল্পনা নেওয়া হবে—তা নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরীণ আলোচনাও চলছে বলে জানা গেছে।

কোর কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পে স্কেল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন নজর থাকবে, সরকার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে গেজেট প্রকাশ ও পরবর্তী কার্যক্রম চূড়ান্ত করে কতটা দ্রুত নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করতে পারে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ