স্কুল পর্যায়ে বহু-ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনার কথা জানালেন তারেক রহমান

স্কুল পর্যায়ে বহু-ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনার কথা জানালেন তারেক রহমান

জাতীয় ডেস্ক

রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে স্কুল স্তর থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য একাধিক ভাষা শেখার সুযোগ বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি জানান, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিশ্বমানের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে ভাষা শিক্ষা, ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় রাজধানীর ফার্মগেটের কেআইবি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘দেশ গঠনে পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ বক্তব্য দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা ও শ্রমবাজারের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নতুন প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তারেক রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, স্কুল স্তর থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজির পাশাপাশি আরও একটি বিদেশি ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে বিদেশে শিক্ষাগ্রহণ, কর্মসংস্থান বা পেশাগত উন্নয়নে সহজেই নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারবে।

তিনি জানান, ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব পছন্দকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কোন ভাষা বেছে নেবে—তা শিক্ষার্থী নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে। উদ্দেশ্য হলো শিশুদের এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে তারা ছোটবেলা থেকেই আত্মবিশ্বাসী, স্বতন্ত্র চিন্তাশীল এবং ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারে। বর্তমান বৈশ্বিক বাজারে বহুভাষা জানার গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী দশকগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা বাড়বে, বিশেষ করে বহুভাষিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশকে এখনই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

তারেক রহমান আরও বলেন, কেবল ভাষা শিক্ষা নয়, ভোকেশনাল শিক্ষার কিছু বিষয়ও বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের শিল্প, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও সেবা খাতে দক্ষ কর্মী তৈরির লক্ষ্যে বিদ্যালয় পর্যায় থেকেই বুনিয়াদি কারিগরি জ্ঞান প্রদানকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন তিনি। ভোকেশনাল বিষয়সমূহ বাধ্যতামূলক করা হলে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা বা চাকরিতে প্রবেশের আগে ব্যবহারিক দক্ষতার ভিত্তি অর্জন করবে। এর ফলে দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বেকারত্ব সমস্যা হ্রাস পেতে সহায়তা করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বহু বছর ধরে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। বিভিন্ন দেশের শিক্ষা নীতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভাষা শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি জ্ঞান এবং জীবনমুখী পাঠ্যক্রমকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেই অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক ধারা বিবেচনায় এনে দেশের শিক্ষা নীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা মনে করেন, প্রাথমিক পর্যায় থেকেই দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া গেলে দেশের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারবে। বিশেষত অভিবাসন খাতের জন্য দক্ষ কর্মী তৈরির ক্ষেত্রে বহুভাষা দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে, যেখানে ভাষাজ্ঞান একটি প্রধান মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সুতরাং স্কুল পর্যায় থেকেই বহুভাষা শিক্ষা চালু হলে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

শিক্ষাব্যবস্থার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কী ধরনের কাঠামো, শিক্ষক প্রশিক্ষণ বা পাঠ্যক্রম সংস্কার প্রয়োজন হবে—তা এখনও বিস্তারিতভাবে ঘোষণা করা হয়নি। তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা, শিক্ষাপ্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করার গুরুত্ব বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন। তারা মনে করেন, বহুভাষা শিক্ষা ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হলে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং আধুনিক ল্যাবরেটরি ও প্রশিক্ষণ সুবিধা স্থাপন অপরিহার্য হবে। পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক শ্রমবাজার বিশ্লেষণ করে কোন জেলায় কোন দক্ষতার চাহিদা বেশি—সেটি নির্ধারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও অতিথিরা বলেন, শিশুদের প্রারম্ভিক পর্যায় থেকেই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করা হলে তাদের সৃজনশীলতা, আত্মবিশ্বাস এবং সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি বিকশিত হবে। বহুভাষা শিক্ষা সেই সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবে পরিকল্পনার বাস্তবায়নে একটি সুসংগঠিত রোডম্যাপ প্রণয়ন, পর্যায়ক্রমিক কার্যক্রম নির্ধারণ এবং সঠিক মূল্যায়ন পদ্ধতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সামগ্রিকভাবে, অনুষ্ঠানে আলোচিত পরিকল্পনাগুলো দেশের ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ উন্নয়নের একটি বিস্তৃত কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে গৃহীত উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভাষা শিক্ষা ও ভোকেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে তোলাই এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করা হয়।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ