খেলাধুলা ডেস্ক
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টকে সামনে রেখে অস্ট্রেলিয়া দলে ফিরেছেন নিয়মিত অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। মেরুদণ্ডের হাড়ের চোট কাটিয়ে পূর্ণ ফিট হয়ে তিনি স্কোয়াডে যুক্ত হয়েছেন। সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে চোটের কারণে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া উভয় ম্যাচেই জয়ের দেখা পায়। এবার কামিন্সের প্রত্যাবর্তনে অ্যাডিলেড টেস্টে স্বাগতিকদের বোলিং আক্রমণে বাড়তি দৃঢ়তা যোগ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৭ ডিসেম্বর অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় টেস্টের জন্য ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ঘোষিত ১৫ সদস্যের দলে একমাত্র পরিবর্তন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন কামিন্স। জুলাই থেকে চোটের কারণে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনুপস্থিত ছিলেন এবং অ্যাশেজের প্রথম দুটি ম্যাচ মিস করেন। দ্বিতীয় টেস্টে তাকে ফেরানোর প্রত্যাশা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় তাকে ফেরানো সম্ভব হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধান কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড জানিয়েছেন, কামিন্স সম্পূর্ণ ফিট হয়ে মাঠে ফিরবেন এবং দলে নেতৃত্ব দেবেন। নেট সেশনগুলোতে তার প্রস্তুতি সন্তোষজনক হয়েছে বলে কোচের মত। তিনি জানান, নতুন কোনো জটিলতা দেখা না দিলে কামিন্স অ্যাডিলেডেই টস করতে নামবেন। দীর্ঘ বিরতির পর ফিরে আসা সত্ত্বেও দলের নেতৃত্ব ফের গ্রহণে তিনি প্রস্তুত।
এদিকে, গত ম্যাচে ইনজুরিতে ভোগা ওপেনার উসমান খাজাও ফিট হয়ে উঠেছেন বলে ধারণা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। পিঠের ব্যথার কারণে তিনি পূর্ববর্তী ম্যাচে শঙ্কার মুখে থাকলেও চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে এখন খেলার উপযোগী বলে বিবেচিত হচ্ছেন। কোচ ম্যাকডোনাল্ড জানান, খাজার ব্যাটিং পজিশন নিয়ে সাধারণ ধারণা থাকলেও দলের প্রয়োজন অনুযায়ী তার নমনীয়তা রয়েছে। এর ফলে ওপেনিংয়ের বাইরে অন্য পজিশনেও তাকে দেখা যেতে পারে।
এবারের স্কোয়াডে থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন—প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), স্কট বোল্যান্ড, অ্যালেক্স ক্যারি, ব্রেনডান ডগেট, ক্যামেরন গ্রিন, ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস, উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশেন, নাথান লায়ন, মাইকেল নেসের, স্টিভেন স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, জ্যাক ওয়েদারল্যান্ড ও ব্যু ওয়েবস্টার।
দলের ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনা হবে কি না, তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু জানায়নি দল। তবে প্রথম দুই টেস্টে সফল সমন্বয় ভাঙা কোচিং স্টাফের জন্য সহজ সিদ্ধান্ত হবে না। খাজার প্রত্যাবর্তনে তাকে একাদশে জায়গা করে দিতে ব্যাটিং ক্রম বিন্যাসে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে, যা দল ব্যবস্থাপনার জন্য বাড়তি ভাবনার কারণ হতে পারে।
বোলিং বিভাগে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা বেশি। কামিন্সের ফেরায় পেস আক্রমণে অভিজ্ঞতা বাড়বে, পাশাপাশি স্পিনার নাথান লায়নকেও একাদশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আগ্রহী দল। যদি লায়নকে রাখা হয়, তবে স্কট বোল্যান্ড, মাইকেল নেসের ও ব্রেনডান ডগেটের মধ্যে দুজন জায়গা হারাতে পারেন। প্রথম দুই টেস্টে স্টার্কের নেতৃত্বে এই তিন পেসার দায়িত্ব পালন করে সফল ছিলেন। তবে কামিন্স-লায়নের প্রত্যাবর্তনে একাদশে জায়গার প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হবে।
অস্ট্রেলিয়া শিবিরে ইতিবাচক খবরের পাশাপাশি নেগেটিভ দিকও রয়েছে। দলের অন্যতম পেসার জশ হ্যাজলউড চলমান সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন। পায়ের চোটের কারণে তার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দল তাকে সামনে রেখে পরিকল্পনা করছে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য।
ইংলিশ শিবিরেও ইনজুরির ছায়া নেমে এসেছে। পেসার মার্ক উড হাঁটুর ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে সিরিজ থেকে বাদ পড়েছেন। দীর্ঘ পুনর্বাসন শেষে দলে ফিরলেও আবার নতুন ইনজুরিতে পড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি। তার পরিবর্তে ডাকা হয়েছে ম্যাথু ফিশারকে।
অ্যাশেজ ঐতিহ্যগতভাবে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতার অন্যতম উজ্জ্বল মঞ্চ। প্রথম দুটি ম্যাচে জয়ের সুবাদে ইতিমধ্যে সিরিজে এগিয়ে রয়েছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় টেস্টে কামিন্সের ফেরায় দল আরও শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামবে। অপরদিকে, ইনজুরির ধাক্কা সামলে ইংল্যান্ড দলও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার আশায় লড়াই চালিয়ে যাবে। অ্যাডিলেড টেস্টে দুই দলের লক্ষ্য থাকবে সিরিজে নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্ট করা এবং আগামীর ম্যাচগুলোয় মানসিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।


