জাতীয় ডেস্ক
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দলটির ভবিষ্যৎ কাঠামো, নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ঢাকা এবং দিল্লির মধ্যে সাম্প্রতিক আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক বৈঠকে আলোচিত হয়েছে বিভিন্ন সম্ভাব্য পরিস্থিতি। তবে এই আলোচনাগুলোর কোনোটিতেই এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনায় জানানো হয়, দলটির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ পর্যালোচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ। ফলে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তবে দলটির যেসব ব্যক্তি কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ নেই, তারা চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান অভিন্ন থাকবে বলে কূটনৈতিক মহলকে জানানো হয়।
সরকার স্পষ্ট করে জানায়, যেসব নেতা বা কর্মীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুরুতর রাজনৈতিক সহিংসতা, দুর্নীতি বা অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে, তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন গ্রহণের অনুমতিও দেওয়া হবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তে নতুন তথ্য-প্রমাণ যুক্ত হওয়ায় গত ১২ মে জারি করা এক সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দলের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সংশ্লিষ্ট নথি অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকা পর্যন্ত দলীয় পরিচয়ে কোনো রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা আইনগতভাবে সম্ভব নয়।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও নির্বাচনী অংশগ্রহণের সম্ভাবনা জানতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরাও গত সপ্তাহগুলোতে সরকারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে যোগাযোগ করেন। তাদের কাছেও সরকার একই অবস্থান তুলে ধরে জানায় যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা নেই, বরং আইনগত প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষিত হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে এই আলোচনাগুলো মূলত আগামী নির্বাচনের অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ বজায় রাখা ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত থাকার স্বার্থেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে দলটির ভেতরে কিছু নেতা-কর্মী ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের নিয়ে নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার ধারণা নিয়ে আলোচনা করেন। তবে এ ধরনের উদ্যোগের প্রতি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সমর্থন দেননি বলে জানা যায়। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই একটি সংগঠন টিকে থাকে এবং পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। তার মতে, রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও সংগঠনকে পুনরায় শক্তিশালী করা সম্ভব এবং ভবিষ্যতে পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দল পুনর্গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলটির নিষ্ক্রিয়তা ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা আগামী দিনের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের প্রভাব ও গণভিত্তি থাকায় তাদের অনুপস্থিতি নির্বাচনী প্রতিযোগিতা ও ফলাফলের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলেও তা দলীয় সংগঠনের স্বাভাবিক রাজনৈতিক শক্তিকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করবে না। এতে সংসদে প্রতিনিধিত্বের ধরন এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জোট গঠনের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
এছাড়া দলটির নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী হবে নাকি পরিস্থিতি বিবেচনায় ভবিষ্যতে পুনর্বিবেচনা করা হবে—তা নিয়েও দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক মহলে আগ্রহ রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের অবস্থান কঠোর এবং কোনো পরিবর্তনের সংকেত পাওয়া যায়নি। নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা–সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে।
সব মিলিয়ে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান, সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ এবং আইনগত প্রক্রিয়ার অগ্রগতি—এসব বিষয়ই আগামী কয়েক সপ্তাহে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে থাকবে।
সূত্র : মানবজমিন।


