আগামী জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটে দায়িত্ব পালনে ফায়ার সার্ভিসের ১৯ কোটি টাকার বরাদ্দ চাহিদা

আগামী জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটে দায়িত্ব পালনে ফায়ার সার্ভিসের ১৯ কোটি টাকার বরাদ্দ চাহিদা

 

জাতীয় ডেস্ক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে কেন্দ্র করে দায়িত্ব পালনের জন্য ১৯ কোটি ৯ লাখ ৩৮ হাজার ১২০ টাকার বরাদ্দ চেয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। নির্বাচনকালীন অগ্নি নিরাপত্তা ও জরুরি সেবা কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে প্রয়োজনীয় জনবল, সরঞ্জাম ও লজিস্টিক সহায়তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সম্প্রতি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের সচিবের কাছেও।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন পূর্ব প্রস্তুতি, ভোটগ্রহণকালীন সময় এবং নির্বাচন-পরবর্তী পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক মোতায়েন নিশ্চিত করা হয়। এ সময়ে কেন্দ্রভিত্তিক অগ্নি নিরাপত্তা কার্যক্রম, জরুরি উদ্ধার প্রস্তুতি, অগ্নিকাণ্ডসহ সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় দ্রুত সাড়া নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত জনবল, যানবাহন, সরঞ্জাম ও লজিস্টিক ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। এসব বিবেচনায় উল্লেখিত অর্থ বরাদ্দ জরুরি বলে চিঠিতে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে।

অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের বিভিন্ন খাতে ব্যয় মেটাতেই বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ছয়টি খাত উল্লেখ করা হয়েছে—দৈনিক খোরাকি ভাতা, আপ্যায়ন ব্যয়, পেট্রোল ও লুব্রিক্যান্ট, অন্যান্য মনিহারি, ব্যবস্থাপনা ব্যয় এবং মেশিন ও সরঞ্জাম ভাড়া। এর মধ্যে পেট্রোল ও লুব্রিক্যান্ট খাতে সর্বোচ্চ ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন প্রতিটি জেলায় স্ট্যান্ডবাই ইউনিট বজায় রাখা, অতিরিক্ত মোবাইল ইউনিট প্রস্তুত রাখা এবং বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত সাড়া নিশ্চিত করতে এ ব্যয় প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

খোরাকি ভাতা ও আপ্যায়ন ব্যয়ের বরাদ্দ মূলত মাঠপর্যায়ের সদস্যদের দীর্ঘ সময়ব্যাপী দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত মেশিনারি ও বিশেষায়িত সরঞ্জাম ভাড়া, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিবহন খাতেও অর্থ ব্যয় হবে। অগ্নিনির্বাপণ যান, অ্যাম্বুলেন্স, রেসকিউ ইউনিটের প্রস্তুতি ও কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে এসব বাজেট অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছে অধিদপ্তর।

বাংলাদেশে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। ভোটকেন্দ্র, নির্বাচনী কার্যালয়, সমাবেশস্থল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন লাগা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, আতঙ্ক সৃষ্টি বা নাশকতার ঝুঁকি থাকে বলে ফায়ার সার্ভিসকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে থাকতে হয়। বিশেষ করে দূর-দুরান্তের গ্রামীণ এলাকার কেন্দ্রগুলোতে দ্রুত সেবা পৌঁছাতে অতিরিক্ত যানবাহন ও জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়ে।

নির্বাচন কমিশন সাধারণত বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার নিয়োজিত কর্মীদের ভাতা এবং নির্বাচনী দায়িত্ব সংক্রান্ত অন্যান্য ব্যয় নিজস্ব বাজেট থেকে পরিশোধ করে থাকে। এ বছর নির্বাচন ও গণভোট দুটিই একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় মাঠপর্যায়ে অতিরিক্ত সমন্বয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অগ্নি প্রতিরোধ প্রস্তুতি এবং জরুরি সেবা প্রদানে ব্যয়ের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সে কারণে নির্বাচনকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক বৈঠকে কমিশন সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কাছ থেকে বাজেট চেয়ে নিয়েছে। প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহ পর্যালোচনা করে কমিশন চূড়ান্ত বাজেট অনুমোদন করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনকালীন অগ্নি নিরাপত্তা শুধু কেন্দ্রের সুরক্ষা নয়, বরং নির্বাচন-সম্পর্কিত পুরো অবকাঠামোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সনাক্তকরণ, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার পর্যাপ্ততা যাচাই, বিকল্প সাড়া ইউনিট সক্রিয় রাখা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের পরিস্থিতিতে দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা—এসবের সমন্বয়ে একটি সুসংগঠিত প্রস্তুতি প্রয়োজন। বরাদ্দ অনুমোদিত হলে ফায়ার সার্ভিস এ ধরনের প্রস্তুতি আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে।

এছাড়া নির্বাচনী এলাকা ও কেন্দ্রসংলগ্ন স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফায়ার সার্ভিসের জেলা ও উপজেলা ইউনিটগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হবে। সম্ভাব্য ঝুঁকি পর্যালোচনা, কেন্দ্রভিত্তিক নজরদারি, সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম এবং জরুরি প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনাও প্রণয়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন পেলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সময় সারাদেশে অগ্নি নিরাপত্তা কার্যক্রম আরও সমন্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ভোটগ্রহণকেন্দ্র ও আশপাশের পরিবেশ নিরাপদ রাখতে, জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দিতে এবং নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা মিলবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ