জাতীয় ডেস্ক
আগামী ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে। সেদিন সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, যেখানে তিনি নির্বাচন আয়োজনের সূচি ও প্রাসঙ্গিক নির্দেশনা প্রকাশ করবেন। বুধবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ইসি সূত্র অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুসংগঠিত রাখতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজের কার্যালয়ে ভাষণটি রেকর্ড করেন। রেকর্ডিং শেষে কমিশনের সকল সদস্য সিইসির কক্ষে বৈঠকে অংশ নেন। ওই বৈঠকে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি, প্রশাসনিক ব্যস্ততা এবং পরবর্তী ধাপগুলোর সামগ্রিক অগ্রগতি বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠক শেষে ইসির সিনিয়র সচিব সাংবাদিকদের কাছে সার্বিক প্রস্তুতির তথ্য উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, যা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে বিবেচিত হয়। তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থিতা চূড়ান্তকরণ, মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহার এবং আনুষ্ঠানিক প্রচার কার্যক্রম শুরু করতে পারে। এ কারণে তফসিল ঘোষণাকে নির্বাচনী সময়সূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটি হিসেবে দেখা হয়। নির্বাচন কমিশনও এই পর্যায়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে, যাতে পরবর্তী প্রতিটি কার্যক্রম সুসমন্বিতভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়।
সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে দায়িত্ব বণ্টন ও নির্দেশনা প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, ভোটার, প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট নির্দেশনা ও বিধিবদ্ধ সময়সূচি প্রকাশ করবে, যা নির্বাচনসম্পন্নের পুরো সময়জুড়ে কার্যকর থাকবে। তফসিল ঘোষণার আগে কমিশন বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় ও প্রস্তুতিমূলক বৈঠক শেষ করেছে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। নতুন তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে আগামী কয়েক মাসজুড়ে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে। রাজনৈতিক দলগুলো মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও প্রচারে মনোযোগ দেবে এবং ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনও নির্বাচনী পরিবেশ স্বচ্ছ ও নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, এবার একাধিক ধাপের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী উপকরণ প্রস্তুত, প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন, কেন্দ্র স্থাপনের তালিকা চূড়ান্ত করা এবং নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ। এ ছাড়া নির্বাচনের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রাখা হবে। ভোটারদের সুবিধার্থে ইসির ওয়েব পোর্টাল ও তথ্যসেবায় প্রয়োজনীয় তথ্য সহজভাবে উপস্থাপন করারও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরই প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিচ্ছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, তথ্য যাচাই এবং কেন্দ্রভিত্তিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ বাড়ানো হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর এসব প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা আরও সক্রিয় হবে, যাতে মনোনয়ন, যাচাই-বাছাই এবং প্রচার-সংক্রান্ত তথ্য দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ করা সম্ভব হয়।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক দলগুলোকে প্রচারণায় বিধি-নিষেধ ও আচরণবিধি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আচরণবিধি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কমিশন নির্বাচনী সহিংসতা প্রতিরোধে প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে বিশেষ পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে।
আগামীকাল তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে। নির্বাচন কমিশন আশা করছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলকভাবে সম্পন্ন হবে।


