ডেঙ্গুতে আরও তিনজনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৪২১

ডেঙ্গুতে আরও তিনজনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৪২১

জাতীয় ডেস্ক

গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আরও ৪২১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এ নিয়ে ডেঙ্গুতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০১ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৯৮ হাজার ৭০৫-এ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দৈনিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দু’জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা এবং একজন বরিশাল বিভাগের সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে বসবাস করতেন। নতুন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে বরিশাল বিভাগে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ৪২১ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগে সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ৬৪ জন, ঢাকা বিভাগের সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ৭৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭৫ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭২ জন রোগী ভর্তি হন। চট্টগ্রাম বিভাগে সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ৬৩ জন, খুলনা বিভাগে সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ৩০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ৩১ জন, রাজশাহী বিভাগে সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ১২ জন এবং রংপুর বিভাগের সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে একজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

নতুন আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬১.৫ শতাংশ, আর নারীর সংখ্যা ৩৮.৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসা শেষে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫২৮ জন। চলতি বছরে মোট ছাড়পত্রপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ৭৬০ জনে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে ঢাকার শহর অঞ্চল সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। বরিশাল বিভাগ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলায় ডেঙ্গু সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা এ রোগের বিস্তৃতি সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংরক্ষণ করে আসছে ২০০০ সাল থেকে। দীর্ঘ সময়ে ওঠানামার মধ্য দিয়ে গেলেও ২০২৩ সাল ডেঙ্গুর জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ বছর ছিল। সেই বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী এবং মৃত্যু হয়েছিল এক হাজার ৭০৫ জনের, যা দেশে এ রোগ নিয়ে সর্বোচ্চ বার্ষিক পরিসংখ্যান। ২০২৪ সালেও ডেঙ্গুর তীব্রতা কমেনি; সে বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের।

চলতি বছরে আক্রান্তের সংখ্যা গত দুই বছরের তুলনায় কম হলেও রোগীর চাপ এখনও উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে নগরাঞ্চলে রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় হাসপাতালগুলোতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আবহাওয়ার পরিবর্তন, জনবসতির ঘনত্ব, অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং এডিস মশার প্রজননস্থল নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা ডেঙ্গুর বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। বর্ষা এবং তার পরবর্তী সময়ে রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঋতুভেদে ডেঙ্গুর প্রকোপের তারতম্য কমে এসেছে। ফলে বছরের প্রায় সব সময়েই রোগী শনাক্ত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ সমন্বিতভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করেছে। বাড়িঘর, নির্মাণাধীন ভবন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে জমে থাকা পানি এডিস মশার প্রজননের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এসব স্থান নিয়মিত পরিদর্শন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি মানুষকে ঘরের ভেতর ও আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা, জমে থাকা পানি অপসারণ এবং ব্যক্তিগত সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা এবং জনসচেতনতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। সম্প্রসারিত নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামগ্রিক পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আরও বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। দেশজুড়ে রোগীর বিস্তৃতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা এখন অত্যাবশ্যক।

চলমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিনই রোগী সংখ্যার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সরকারি সংস্থা, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগই কার্যকর ফল দিতে পারে বলে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে।

শীর্ষ সংবাদ স্বাস্থ্য