রাজনীতি ডেস্ক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মানবাধিকার দিবসকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অতীত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নিপীড়ন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার সংকট নিয়ে মন্তব্য করেছেন। বুধবার তার ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি দাবি করেন, দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চলমান ছিল এবং এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৬ বছরে রাজনৈতিক পরিবেশ অনেকের জন্যই অনিশ্চয়তা, ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার উৎস ছিল। তারেক রহমানের দাবি অনুযায়ী, রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী গুম, মিথ্যা মামলা, হেফাজতে মৃত্যু ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময়ও দলের অনেক নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।
তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে আরও দাবি করেন যে কেবল বিএনপি নয়, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, লেখকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষও মানবাধিকার সংকটে পড়েছিলেন। তাঁর মতে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও মানবিক মর্যাদা বিগত সময়গুলোতে হুমকির মুখে ছিল। তিনি উল্লেখ করেন যে ২০১৫ সাল থেকে তাঁর ব্যক্তিগত বক্তব্য প্রচারের ওপরও বাধা আরোপ করা হয়েছিল বলে তিনি মনে করেন।
পোস্টে তিনি দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার ভূমিকা ও অবস্থানও তুলে ধরেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক প্রতিকূলতা, কারাবাস ও বিভিন্ন মামলার মধ্যেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে অবিচল ছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন যে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দৃঢ়তা ও সহনশীলতা দলকে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে এবং একই সঙ্গে বিরোধী মতের প্রতি সহনশীলতার গুরুত্বও সামনে এনেছে।
নিজ পরিবার ও দলের ভেতরকার চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গ টেনে তিনি দাবি করেন, অতীতের রাজনৈতিক অস্থিরতায় তাঁর পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে বলেন, পরিবারের ওপর চাপ, কারাবাস ও নানামুখী সংকট তাঁদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল।
বিবৃতিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, মানবাধিকার পরিস্থিতি পুনর্গঠন ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে বিভেদ নয়, বরং সংলাপ ও সমাধানমুখী রাজনীতি প্রয়োজন। তিনি জানান, বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি এড়িয়ে সমঝোতা, জবাবদিহি ও আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের রাষ্ট্র বিনির্মাণে বিশ্বাসী।
মানবাধিকার দিবসের প্রেক্ষাপটে তিনি অতীতের বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ করেন এবং জানান, বিভিন্ন নিপীড়ন, গুম, হত্যাকাণ্ড বা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা যেন ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলেন যে এসব ঘটনা দেশের মানবাধিকার অঙ্গনের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারেক রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, বিএনপি অতীতের ক্ষতি সত্ত্বেও সংগঠিত রয়েছে এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর দাবি, দলটি এমন একটি বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, যেখানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চয়তা পাবে, ভিন্নমতের কারণে কেউ নিপীড়নের শিকার হবে না এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরা এসব বক্তব্য বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান, অতীত ঘটনায় দলের মূল্যায়ন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দলটির সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। মানবাধিকার দিবসকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের এমন আলোচনাকে বিশ্লেষকরা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করে থাকেন, কারণ এটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার প্রতি আলোকপাত করে।


