জাতীয় ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ নির্বাচন কমিশনের চার কমিশনার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বুধবার দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে তারা বঙ্গভবনে পৌঁছান। নির্বাচন আয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অগ্রগতি এবং তফসিল ঘোষণার পূর্ববর্তী আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করাই ছিল তাদের এ সাক্ষাতের মূল উদ্দেশ্য।
রীতি অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন বা গণভোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের আগে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতিকে সার্বিক প্রস্তুতি উপস্থাপন করে থাকে। এ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় কমিশন তফসিল ঘোষণার আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, লজিস্টিক প্রস্তুতি, ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য সময়সূচি, দায়িত্ব বণ্টন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করে যে সাংবিধানিক কাঠামো অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়াটি যথাযথভাবে অগ্রসর হচ্ছে।
বৈঠকে তফসিল ঘোষণার সময়সূচি, ভোটগ্রহণের tentative তারিখ এবং নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের পরিকল্পনা বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা যায়। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম, ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতি, নির্বাচন সামগ্রী পরিবহণ এবং প্রাথমিক পর্যায়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের অবস্থা রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হয়। এর পাশাপাশি, আগাম নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কমিশনের সমন্বয় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও আলোচনায় উঠে আসে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষ করার পর নির্বাচন কমিশন দিনের পরবর্তী ধাপ হিসেবে তফসিল ঘোষণার ভাষণ প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে। নির্বাচন ভবনে বিকেল ৪টায় সিইসির ভাষণ রেকর্ড করার কথা রয়েছে। এই রেকর্ডকৃত ভাষণ পরদিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচার করা হবে। তফসিল ঘোষণার এই ধারাটি বহুদিন ধরেই দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চালু রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করা হবে। একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে একই দিনে দুটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভোটকেন্দ্রের সক্ষমতা মূল্যায়ন, ব্যালটপেপার ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা সমন্বয় এবং আইনগত কাঠামোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন একটি বড় ধরনের প্রশাসনিক ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ। এর জন্য প্রশিক্ষণ, পরিবহণ, নিরাপত্তা, পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ও ব্যালট ব্যবস্থাপনায় বাড়তি প্রস্তুতি প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি এগিয়ে যাওয়ায় এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের সক্ষমতা মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে একই দিনে একাধিক জাতীয় কার্যক্রম আয়োজনের রূপকাঠামো তৈরিতেও এই আয়োজন একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়ন, প্রচার-প্রচারণা, আচরণবিধি কার্যকর এবং পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমও শুরু হবে তফসিল ঘোষণার পরই। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে আচরণবিধি ও শেখরূপে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। আসন্ন দিনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় আরও জোরদার হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে, যা আসন্ন ভোটকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন ও দেশের সামগ্রিক পরিবেশে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি এবং সাংবিধানিক আনুষ্ঠানিকতার পরবর্তী ধাপগুলো সম্পন্ন হলে দেশ আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে।


