প্রবাসীদের পোস্টাল ভোটে নিবন্ধন ২ লাখ ৯২ হাজার ছাড়াল

প্রবাসীদের পোস্টাল ভোটে নিবন্ধন ২ লাখ ৯২ হাজার ছাড়াল

জাতীয় ডেস্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ডাকভোট ব্যবস্থার আওতায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ চালু করেছে, সেখানে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ইসির তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন মোট ২ লাখ ৯২ হাজার ১৯০ জন প্রবাসী ভোটার। এর মধ্যে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৯ জন পুরুষ এবং ২২ হাজার ৭৫১ জন নারী।

ইসি জানিয়েছে, অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করা প্রবাসী ভোটারদের প্রতি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। নিবন্ধনকারী ভোটাররা ডাকযোগে প্রাপ্ত ব্যালটে চিহ্ন দিয়ে তা নির্ধারিত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ফিরতি খামের মাধ্যমে পাঠাতে পারবেন। এই পুরো প্রক্রিয়াটি প্রবাসীদের দূরবর্তী অবস্থান থেকেও সাংবিধানিক ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে সংস্থাটি মনে করছে।

পোস্টাল ভোট ব্যবস্থায় এ ধরনের অংশগ্রহণ এবারই প্রথম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর আগে দেশের বাইরে থাকা ভোটারদের সরাসরি ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ইসি আইটি-সমর্থিত ডাকভোট পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়, যা প্রবাসীদের পাশাপাশি আইনগত হেফাজতে থাকা ব্যক্তি ও নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছে। নির্দিষ্ট অ্যাপে নিবন্ধন সম্পন্ন করলে এই শ্রেণির যে কেউ ডাকভোটে অংশ নেওয়ার যোগ্য হবেন।

ইসির নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধন শুরু হয়েছে গত ১৯ নভেম্বর। চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনো ঘোষণা করা হয়নি। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সময়সীমার শেষ সপ্তাহে নিবন্ধনের হার আরও বাড়তে পারে, কারণ বহু প্রবাসী কর্মসূচিটি সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে অবহিত হচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে সময় নিচ্ছেন।

নিবন্ধন চলছে এমন দেশের পরিধিও বাড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, মিসর, মোজাম্বিক, লিবিয়া, মরিশাস, হংকং, ব্রাজিল, উগান্ডা, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, বতসোয়ানা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, তানজানিয়া, সোমালিয়া, ঘানা, গিনি, মরক্কো, দক্ষিণ সুদান, চিলি, সিয়েরা লিওন, ইকুয়েডর, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গাম্বিয়া, পেরু, জিম্বাবুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা বাংলাদেশিরা এ ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারছেন। এসব দেশে প্রবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি ও ব্যালট পরিবহন সংশ্লিষ্ট লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা ইসির জন্য একটি বড় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডাকভোট পাঠানো ও ফেরত পাওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ডাক বিভাগ ও দূতাবাসগুলোর সহযোগিতায় সম্পন্ন হবে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রতিটি নিবন্ধনকারীর বর্তমান ঠিকানায় ব্যালট পৌঁছাতে আন্তর্জাতিক ডাকব্যবস্থার সময়সীমা বিবেচনা করা হয়েছে। ব্যালট পাঠানো, ভোটার কর্তৃক তা পূরণ করে ফেরত পাঠানো এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছানো—এই পুরো সময়ব্যবস্থা নির্দিষ্ট নিয়মে সমন্বয় করে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে।

প্রবাসী ভোট কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের বাইরে থাকা বড় আকারের ভোটারগোষ্ঠীকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা। ইসি জানায়, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত বা যোগ্য থাকতে পারেন। তাদের অন্তত একটি বড় অংশকে ভোটের আওতায় আনতে বর্তমান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, নিবন্ধনের সংখ্যা যত বাড়বে, পূর্ববর্তী নির্বাচনের তুলনায় প্রবাসী ভোটের অংশগ্রহণ তত বৃদ্ধি পাবে—যা সামগ্রিক ভোটদানের হারেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ইসির নির্বাচনী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। প্রবাসীদের ডাকভোট গ্রহণের এই প্রক্রিয়াটি মূল নির্বাচনি কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করতে হবে। ব্যালট পরিবহন, যাচাই, গণনা এবং ফলাফল অন্তর্ভুক্তিসহ প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনাও ইসি গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।

ডাকভোট ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন প্রবাসীদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি করেছে বলে বিভিন্ন দূতাবাস কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে। তারা মনে করেন, দীর্ঘদিন পর প্রবাসীরা নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়ার একটি নতুন পথ পাচ্ছেন। তবে একই সঙ্গে ডাকব্যবস্থার সময়সীমা, ব্যালট সঠিকভাবে প্রাপ্তি ও ফেরত পাঠানোর জটিলতা কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিনির্ভর মনিটরিং এবং নিয়মিত সমন্বয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

সার্বিকভাবে ডাকভোট ব্যবস্থায় প্রবাসীদের নিবন্ধন সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ইসি এটিকে নির্বাচনী অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচনা করছে। নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ব্যালট পাঠানো, ভোটগ্রহণ এবং গণনার সময়সীমা নিয়ে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করবে সংস্থাটি।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ