বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপের ১২তম অধিবেশন শুরু

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপের ১২তম অধিবেশন শুরু

 

জাতীয় ডেস্ক

২০১২ সালে প্রথম শুরু হওয়া বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপের ধারাবাহিকতায় এর ১২তম অধিবেশন ১০ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুই দেশের বিস্তৃত সামরিক সহযোগিতা ও কৌশলগত সম্পর্কের উন্নয়ন উদ্দেশ্যে আয়োজিত এ সংলাপে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করছে।

সংলাপের উদ্বোধনী অধিবেশনসহ বিভিন্ন কর্মপর্বে সামরিক সহযোগিতার বহুমাত্রিক বিষয় আলোচনায় উঠে আসছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অপারেশন্স ও পরিকল্পনা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আলী হায়দার সিদ্দিকী বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারাহ রুস। দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সংলাপের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পর্কের ভিত্তি ও সম্ভাবনা এই সংলাপের অন্যতম মূল আলোচ্য বিষয়। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে দুটি দেশের মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। সেই প্রেক্ষাপটে প্রতিরক্ষা সংলাপ সামরিক যোগাযোগ জোরদার, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে। বিশেষত ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্র নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা, দুর্যোগ মোকাবিলা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সহযোগিতার গুরুত্ব সংলাপে গুরুত্বের সাথে প্রতিফলিত হচ্ছে।

সংলাপে উভয় পক্ষ প্রযুক্তিগত সহায়তা, সামরিক সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও আধুনিক প্রতিরক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ, বিশেষায়িত সক্ষমতা বৃদ্ধি, শান্তিরক্ষা মিশনে পারস্পরিক সহায়তা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতা উন্নয়নের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল সামরিক সহযোগিতার দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে বলে জানা যায়।

এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন। বিভিন্ন সংস্থার অংশগ্রহণ সংলাপকে আরও সমন্বিত কাঠামো প্রদান করছে। সীমান্ত নিরাপত্তা, সমুদ্র সম্পদ সুরক্ষা, আন্তঃসংস্থা সমন্বয় এবং দুর্যোগকালে যৌথ কার্যক্রমের মতো বিষয়গুলোও আলোচনায় স্থান পেয়েছে।

সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শান্তিরক্ষা অভিযানে বাংলাদেশের অবদান ও সক্ষমতা আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর পথ খোঁজা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে অন্যতম প্রধান সৈন্য-অবদানকারী দেশ; ফলে এই ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিধি আরও বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও শান্তিরক্ষা প্রশিক্ষণ, কৌশলগত পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগের সম্ভাবনাও সংলাপের আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণতা বিবেচনায় উভয় দেশের মধ্যে জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা, উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা, উপকূলীয় এলাকায় সক্ষমতা উন্নয়ন এবং মানবিক সহায়তা মিশনে সমন্বিত উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। উন্নত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার বিনিময় এ সহযোগিতা আরও জোরদার করতে সক্ষম।

সংলাপের মাধ্যমে সামরিক মহড়া, পরিদর্শন কার্যক্রম, কর্মশালা, তথ্য আদান–প্রদান এবং যৌথ প্রশিক্ষণের নতুন সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা চলছে। দুই দেশই মনে করছে, ধারাবাহিক সংলাপ পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি, সম্পর্কের স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং প্রতিরক্ষা খাতে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা গতিশীলতার প্রেক্ষাপটে দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতার পরিধি আরও বিস্তৃত হতে পারে।

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সামরিক দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সংলাপ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ুজনিত ঝুঁকি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, সাইবার নিরাপত্তা ও সমুদ্রপথে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নতুন সহযোগিতা কাঠামো গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপের ধারাবাহিকতা দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সংলাপ শেষ হওয়ার পর উভয় পক্ষ তাদের আলোচনার সারসংক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করবে, যা আগামী বছরের সহযোগিতা কার্যক্রমের দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ