খেলাধুলা ডেস্ক
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বাদশ আসর আগামী ২৬ ডিসেম্বর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পর্দা তুলতে যাচ্ছে। টুর্নামেন্ট শুরুর পূর্বমুহূর্তে চট্টগ্রাম রয়্যালস ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে আর্থিক দায়-দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছিল, তা পরিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বোর্ড জানিয়েছে, ফ্র্যাঞ্চাইজিটি নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত সব ফি ও ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দিয়েছে।
বিসিবির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল স্থির করে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ২ কোটি টাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি এবং ১০ কোটি টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দিতে হয়। চট্টগ্রাম রয়্যালস সংশ্লিষ্ট সব আর্থিক দায়-দায়িত্ব ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে এবং এ বিষয়ে যে বিভিন্ন প্রশ্ন বা জল্পনা তৈরি হয়েছিল, তা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত খবর তাদের নজরে এসেছে এবং সঠিক তথ্য উপস্থাপনের স্বার্থে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন হয়েছিল।
গত আসরে চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নিয়ে বেতন বকেয়া রাখা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। চলতি মৌসুমে মালিকানা পরিবর্তনের পর ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রস্তুতি, চুক্তিপত্র এবং আর্থিক কাঠামো নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠলেও বিসিবির ব্যাখ্যার মাধ্যমে তা নিরসন হলো। বোর্ডের বক্তব্য অনুযায়ী, নির্ধারিত নিয়ম মেনে আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করায় চলতি মৌসুমে দলটি অংশগ্রহণে কোনো বাধা নেই এবং বিপিএল আয়োজনের কার্যক্রমও পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে।
এদিকে বিপিএলের নতুন মৌসুমের সূচি অনুযায়ী তিন ভেন্যু—সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকা—জুড়ে মোট ৩৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী পর্ব শুরু হবে সিলেটে, এরপর চট্টগ্রাম পর্ব শেষে ঢাকা পর্বে খেলা গড়াবে। পুরো আসরের পর্দা নামবে আগামী ২৩ জানুয়ারি মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে। এবারের আসরে ছয়টি দল অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে দুটি পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি—ঢাকা ক্যাপিটালস ও রংপুর রাইডার্স। বাকি দলগুলো হলো সিলেট টাইটানস, চট্টগ্রাম রয়্যালস, রাজশাহী ওয়ারিয়র্স এবং নোয়াখালী এক্সপ্রেস।
চট্টগ্রাম রয়্যালসের দল ঘোষণা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দলে আছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, উদীয়মান তরুণ এবং বিদেশি শক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি সমন্বিত স্কোয়াড। স্কোয়াডে রয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান, তানভীর ইসলাম, আবরার আহমেদ, নাঈম শেখ, শরিফুল ইসলাম, আবু হায়দার রনি, মাহমুদুল হাসান জয়, মাহফিজুল ইসলাম রবিন, সুমন খান, জিয়াউর রহমান, আরাফাত সানি, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, শুভাগত হোম চৌধুরী, সালমান হোসাইন ইমন, জাহিদউজ্জামান খান ও নিরোশান ডিকওয়েলা।
বিপিএলের আগের মৌসুমগুলোতে চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজি মাঠের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশাসনিক ও আর্থিক আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। এ মৌসুমে মালিকানা পরিবর্তন ও বিসিবির আর্থিক নিশ্চয়তা ঘোষণার মাধ্যমে দলটির দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। বিপিএল আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল ফ্র্যাঞ্চাইজির আর্থিক কাঠামো সুশৃঙ্খল থাকা টুর্নামেন্টের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। বিসিবির অবস্থান অনুযায়ী, সময়মতো সব ফি পরিশোধের ফলে দলটিকে ঘিরে কোনো প্রশাসনিক বাধা থাকছে না এবং টুর্নামেন্টের প্রস্তুতিও স্বাভাবিক ধারায় চলছে।
বিপিএলের চলমান প্রস্তুতিতে মাঠ, নিরাপত্তা, সম্প্রচার, টিকিটিং ও অন্যান্য লজিস্টিকসহ সব ধরনের ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ মৌসুমেও দেশি-বিদেশি পারফরমারদের উপস্থিতিতে প্রতিযোগিতা জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে তিন ভেন্যুতে ম্যাচ আয়োজনের ফলে বেশি সংখ্যক দর্শক খেলা উপভোগের সুযোগ পাবেন এবং অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলই সমান সুযোগে প্রস্তুতি ও কৌশল সাজানোর সুযোগ পাবে।
চট্টগ্রাম রয়্যালসের স্কোয়াডে অভিজ্ঞ স্পিনার, পেসার ও ব্যাটসম্যানদের সমন্বয় দলটিকে প্রতিযোগিতায় সম্ভাবনাময় অবস্থানে রেখেছে। স্থানীয় ক্রিকেটারদের পাশাপাশি বিদেশি ক্রিকেটারের অন্তর্ভুক্তি দলটির ব্যাটিং ও বোলিং গভীরতা বাড়াবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিপিএলে দলগুলোর পারফরম্যান্স অনেকটাই নির্ভর করে ম্যাচভিত্তিক কৌশল, দলের কম্বিনেশন এবং খেলোয়াড়দের ফর্মের ওপর। তাই চট্টগ্রাম রয়্যালসের মাঠের পারফরম্যান্স নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে ইতিবাচক প্রত্যাশা দেখা যাচ্ছে।
বিপিএল দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম বৃহৎ আয়োজন, যেখানে তরুণ ক্রিকেটারদের নিজেদের সামর্থ্য তুলে ধরার বড় সুযোগ তৈরি হয়। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার সুযোগ তাদের আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ কারণে বিপিএলের সফল আয়োজন শুধু দর্শকদের বিনোদন নয়, দেশের ক্রিকেট কাঠামোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে যে অনিশ্চয়তার কথা মাঠে ও প্রশাসনিক মহলে আলোচিত হচ্ছিল, বিসিবির আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে তা দূর হয়েছে। সকল আর্থিক দায়-দায়িত্ব পরিশোধের ফলে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি মাঠের প্রস্তুতিতে এখন পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারবে এবং বিপিএলের নতুন আসর প্রতিযোগিতামূলক ও সুশৃঙ্খলভাবে আয়োজনের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ এগিয়ে গেল।


