জেলা প্রতিনিধি
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মুক্ত মঞ্চে আয়োজিত কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলে তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা, দীর্ঘ পথচলা এবং বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন দলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপির নির্বাহী কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।
দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁরা নেত্রী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও দোয়ার আয়োজন করা হচ্ছে, যা তাঁর প্রতি দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রত্যাশা ও আবেগকে প্রতিফলিত করে। তিনি উল্লেখ করেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও সংগঠন পরিচালনা করেছেন।
বক্তারা বলেন, আশির দশকের রাজনৈতিক পরিবেশে বিএনপির পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণে খালেদা জিয়ার ভূমিকা দলকে সংগঠিত করে। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ওই সময়টি ছিল উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সময়, যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে গণমানুষের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। এই প্রেক্ষাপটেই তাঁকে নেতৃত্বের স্থানে আসে এবং দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ জোরদার হয়।
ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল তাঁর বক্তব্যে খালেদা জিয়ার বিদেশ চিকিৎসা ও দেশে ফেরার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থানের পর দেশে ফেরার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তিনি দলের পাশে থাকার অঙ্গীকার বজায় রেখেছিলেন। দলের স্থানীয় নেতাদের দাবি অনুযায়ী, দেশে ফেরার পর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং দলীয় নেতারা তাঁর উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছেন।
এসময় তিনি অভিযোগ করেন যে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো জটিলতায় পড়েছে এবং দলের পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হচ্ছে। এই দাবির বিষয়ে তিনি শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে খালেদা জিয়ার দীর্ঘ সক্রিয়তা এবং সরকার ও বিরোধী দলের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছে। তাঁরা দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত থাকার আহ্বান জানান এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখার ওপর জোর দেন।
দোয়া মাহফিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও জেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মুফতি মুবারকুল্লাহ মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাতে বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক সহাবস্থানের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম সিরাজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় নেতারা জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অগ্রগতি ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতারা বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দলীয় ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসরণ করা হবে। তাঁরা আরও জানান, দলীয় কর্মসূচিগুলো শান্তিপূর্ণভাবে পালন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার সুস্থতা দলীয় মনোবল ও সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।


