মেগা প্রকল্পে না গিয়ে শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগের অঙ্গীকার তারেক রহমানের

মেগা প্রকল্পে না গিয়ে শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগের অঙ্গীকার তারেক রহমানের

রাজনীতি ডেস্ক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের উন্নয়নকে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই ভিত্তিতে দাঁড় করাতে তার দল ক্ষমতায় গেলে বড় অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্পের পরিবর্তে শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। বুধবার, ১০ ডিসেম্বর দলটির উদ্যোগে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ বক্তব্য দেন।

আলোচনা সভায় দলের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করতে গিয়ে তিনি বলেন, যেসব খাতে বড় আকারের ব্যয় হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়, সেসব মেগা উদ্যোগে বহুসময় জটিলতা ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ দেখা দেয়। তারেক রহমানের মতে, এ ধরনের প্রকল্পে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ব্যয় বৃদ্ধি জাতীয় অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তিনি জানান, এসব কারণ বিবেচনায় তার দল উন্নয়ন কাঠামোকে নতুনভাবে পুনর্বিন্যাস করতে চায়, যাতে অগ্রাধিকার পায় শিক্ষা, দক্ষ জনবল তৈরি ও গবেষণা–উদ্ভাবন খাত।

তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির ভিত্তি হতে পারে এমন শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী রূপান্তরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঠ্যক্রম সংস্কার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। তাই শুধু অবকাঠামো নয়, মানবসম্পদ তৈরিতে বিনিয়োগই ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার অন্যতম শর্ত।

আলোচনা সভায় তুলে ধরা পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয় যে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে একটি দীর্ঘমেয়াদি মানবসম্পদ উন্নয়ন কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এতে প্রযুক্তিগত জ্ঞান, কারিগরি শিক্ষা, স্টার্টআপ উদ্যোগে সহায়তা, পেশাগত প্রশিক্ষণ এবং উদ্ভাবনী কার্যক্রমে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়। তারেক রহমান বলেন, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ খাতে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলে উদ্যোক্তা তৈরি, সেবাখাতের সম্প্রসারণ, শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হওয়া এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তিনি জানান, দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে হলে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় দক্ষ জনশক্তির অবদান নিশ্চিত করা জরুরি।

আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, যেকোনো রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে শিক্ষা বিনিয়োগকে সর্বাধিক ফলপ্রসূ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে জ্ঞানভিত্তিক খাতের প্রতিযোগিতা বাড়ছে এবং দেশগুলো প্রযুক্তি, গবেষণা, উদ্ভাবন ও কারিগরি দক্ষতায় নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে মানবসম্পদ উন্নয়নকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করলে তা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি মজবুত করতে সাহায্য করতে পারে।

তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রযুক্তি-নির্ভর উদ্যোগ, উদ্যোক্তা সহায়তা এবং বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় সভায়। এ ছাড়া শ্রমবাজারের কাঠামোগত পরিবর্তন, স্বয়ংক্রিয়তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসারের ফলে নতুন দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাওয়ায় এই খাতে নীতিগত বিনিয়োগ জরুরি বলে মত দেন বক্তারা।

আলোচনা সভায় উপস্থাপিত প্রস্তাবে আরও বলা হয়, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দাঁড় করালে উন্নয়ন ব্যয়ের কার্যকারিতা বাড়বে, রাজস্ব কাঠামো স্থিতিশীল থাকবে এবং বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা কমতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে তা শ্রম উৎপাদনশীলতাকে বাড়িয়ে জাতীয় আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অনুষ্ঠানে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা দেশের উন্নয়ন কৌশল, প্রশাসনিক কাঠামো, শিক্ষা সংস্কার, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। তারা জানান, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ালে দেশের মানবসম্পদের সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব।

সভায় দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে তারা অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রযুক্তি, শিল্প ও প্রশাসনিক কাঠামো—প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাস্তবভিত্তিক ও টেকসই নীতির ওপর গুরুত্ব দেবে। এ পরিকল্পনায় শিক্ষা ও মানবসম্পদকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে অন্যান্য খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অগ্রগতির কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ